Thursday, December 31, 2009

হে নূতন !


কাল রাত বারোটা ;
সেন্টপলস্‌ ক্যাথিড্রালের ২০০৯ এর শেষ ঘন্টাধ্বনির
অনুরণন এখনো যেন লেগে র‌ইল কানে,
ভিক্টোরিয়ার পরী থমকে গেল কয়েক মূহুর্তের জন্যে,
সেকেন্ড হুগলী ব্রিজের সার সার গাড়ি নেমে এসে দাঁড়াল সিগন্যালে,
আলোর মালায় সাজানো পার্কস্ট্রীটে তখনো চলছে লেটনাইটের উদ্দামতা,
কোলকাতার আকাশে জমকালো ফায়ার ওয়ার্কস, বাজির শব্দ,
যেন সকলের ততপরতায় একটু তড়িঘড়ি...
বর্ষবিদায় আর নতুন বছরের আগমনীবার্তা ঘোষণা ....
আমরা সম্মোহিত ;
আমরা আবেগ তাড়িত হয়ে কুলো-বরণডালা সজিয়ে সকলে

দূর থেকে দেখি দেবশিশু আসে ছুটে নিয়ে রঙমশাল ।
খিলখিল হাসি ঠোঁটে আলোর কণা চোখের কোণে তার;
নতুন ইশারা চোখের মাঝে ভুলিয়ে দেয় কতকিছু,
ব্যথার গায়ে সুখের প্রলেপ লাগিয়ে দিল তার নরম চাহনি,
কত কান্নাহাসির দোলদোলানো স্রোতে,
অচিরেই ভেসে চলে গেল ২০০৯য়ের আবর্জনা, জঞ্জালপূর্ণ,
একখানা ডিঙিনৌকো; ক্লান্ত তার চেহারা, করুণ তার চাহনি;
নতুন ভোরের নতুন সূর্য তখনো নবদিগন্তে উদিত হয়নি
অন্ধকারের উত্সারিত আলো দিশা দেখালো,
আমরা দেখতে পেলাম ২০১০ কে উঁকি দিছে জানলা দিয়ে,
পা রাখলাম নতুন বছরের দরজার চৌকাঠে;
কত চাওয়া পাওয়ার শেষ হল,
কত বেগ-আবেগের টানাপোড়েনের পরিসমাপ্তি ঘটল ।
কত না বলা কথারা আজও গলার কাছে দলা পাকিয়ে রয়ে গেল;
আবার নতুন করে পাওয়ার প্রত্যাশায় আমরা জাগি নতুন ভোরে,
খুলে দিই পূবের বদ্ধ জানলা, জাগি নতুন ভোরে,
এক কলসী জল ঢেলে দিই চৌকাঠে, আমরা যেন নতুন যুগের ভোরে,
শেষ ট্রেন চলে গেছে কাল রাতে, আবার উঠি নতুন ট্রেনে।


Friday, December 25, 2009

"অবতার বরিষ্ঠায়"

২০০৯ শেষের মুখে... বিগত বছরের অনেক ঘটনার মত আরো একটি ঘটনা নাড়া দিল মনকে। ক্রিসমাস ইভ বর্নময় হয়ে উঠল,নতুন করে আবিষ্কার করলাম জেমস ক্যামেরুন কে। যখন টাইটানিকের ভরাডুবির মধ্যে যে মানুষটি বাঁচিয়ে তুলেছিলেন অনবদ্য এক প্রেমকাহিনী কে সেই মানুষটি আবার নতুন করে রচনা করলেন ইতিহাস। "অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি" সেই রবীন্দ্র সঙ্গীতের সাহায্য নিয়ে বলি এক‌ই অঙ্গে এত রূপের মত অনেক কিছু পেলাম "অবতার " ছবিতে । নেই সস্তার মেলোড্রামা, নেই অহেতুক নাচাকোঁদা । নির্ভেজাল, সংক্ষিপ্ত, "একটুকু ছোঁয়া লাগা" প্রেমকাহিনী । অরণ্য-মঞ্জিলমাঝে একদল উপজাতির প্রকৃতির বুকে স্বাধীন ভাবে বাঁচা, প্রকৃতির অকৃপণ সম্পদকে আঁকড়ে ধরে স্বতন্ত্র অথচ সঙ্ঘবদ্ধভাবে জীবনযাপন এবং ঠিক তার পরেই ঘটমান বর্তমানে যা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে অর্থাত কোথা থেকে তাদের সুস্থ জীবন যাপনে এল এক ঘূর্নিঝড় ...একদল শত্রুপক্ষ চাইলো তাদের শেষ করে উদ্ধার করবে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ আর একদল মিত্রপক্ষ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে একজন প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্য দিয়ে অবিকল সেই উপজাতির মত অবতার তৈরী করে সেই জঙ্গলমহলে প্রেরণ করলো । রোবটের সাহায্য নিল শত্রুপক্ষ আর একধার থেকে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সাহায্যে অরণ্যের সবকিছু শেষ করতে চাইলো। অন্যথায় মিত্রপক্ষ যে অবতার কে প্রেরণ করলো সে অতি অনায়সেই মন জয় করে নিল সেই উপজাতিগোষ্ঠীর ... সহজ কয়েকটি পরীক্ষায় রাজা বলে ঘোষিত হল সেই বীরপুরুষ, প্রেমেও পড়ে গেল একটি মেয়ের | নাতিদীর্ঘ অথচ মনছোঁয়া এক রোমান্স | তবে সব থেকে মনকে নাড়া দিল এই অবতারটিকে যেখানে সে একটি পূর্নাঙ্গ মানুষ, নেই তার কোনো প্রতিবন্ধকতা , তার হৃদয়ের সকল কোমল মনোবৃত্তি তে সাড়া দিল সেই অরণ্য-তনয়া । কিন্তু কি করে হল তার এই অবতারত্বে পদার্পণ? একি সত্যি সফটওয়ারের খেলা নাকি সনাতন ভারতের আদি অকৃত্তিম প্রবাদ পুরুষ শঙ্করাচার্যের "পরকায়া প্রবেশ" ? যা এই ব্রহ্মচারী প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন দক্ষিণের পন্ডিত মন্ডন মিশ্রের স্ত্রী উভয়াভারতী কে । নিজের আত্মিকসত্ত্বা কে এক রাজার দেহে ধারণ করেছিলেন এবং নাবালক, ব্রহ্মচারী শঙ্কর গৃহীর মত তাঁর অনভিজ্ঞ অনাবিষ্কৃত যৌনজীবনকে বুঝে সেই বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করে মন্ডন মিশ্রের স্ত্রী উভয়াভারতীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন | কারণ মাত্র বার বছর বয়সে সকল শাস্ত্রে তিনি পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন ঐ একটি বিষয় ছাড়া ; তিনি হার স্বীকার করতে রাজী নন অথচ সেক্স সম্বন্ধে কোনো জ্ঞান নেই ; তার উপায় বার করেছিলেন যা জেমস ক্যামেরুনের সফটওয়ারের ভাষায় "অবতার" আর শঙ্করাচার্যের "পরকায়া প্রবেশ" । শঙ্কর যা পেরেছিলেন ঐশ্বরিক মায়ার সাহায্য নিয়ে ক্যামেরুন তা প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানের সাহায্যে। মূল কথা "আত্মা অবিনশ্বর" ঠিক যেমন ছোট থেকে আমরা শুনে আসছি কৃষ্ণের দশ অবতারের গল্প । এক এক বার এক একটি কাজের জন্য এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন তাঁরা । ভাগবত গীতার সেই বিখ্যাত উক্তি "পরিত্রাণায় সাধুনাম বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে" আবার মনে করিয়ে দিল স্থান-কাল-পাত্র ভেদে তার যৌক্তিকতা ।

Saturday, December 19, 2009

গীতাঞ্জলি শতবর্ষ পুরষ্কার

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের শতবর্ষ পূর্ত্তি উপলক্ষে দ্বাদশ বেহালা ব‌ইমেলা প্রাঙ্গণে বাংলা কবিতা আর্কাইভের পক্ষ থেকে সদ্যপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ "মোর ভাবনারে" শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ রূপে নির্বাচিত হ'ল । গত ১৫ই ডিসেম্বর বড়িশা হাইস্কুলে ব‌ইমেলা প্রাঙ্গণে কবি বিষ্ণু দে-কথা সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ উপমঞ্চে ইন্দিরা মুখার্জি কে এই পুরষ্কার প্রদান করা হল।



Saturday, December 12, 2009

রেখোনা আঁখিজলে



মনোরম উদ্যান, ম্যাডক্স স্কোয়ার, লিচুপার্ক যাই বলো তোমরা ।
প্রতিদিনের মর্নিংওয়াকের আর কেতাদুরস্ত সান্ধ্যভ্রমণের,
কিম্বা নিরিবিলির কিশোরপ্রেমের অথবা একান্ত আপনজনের প্রতীক্ষার বেঞ্চিপাতা;
কিছুটা গোলাপের কেয়ারি করা, কিছুটা রেলিং দিয়ে ঘেরা মরশুমি ফুল।
ঘিরে দিলেই মনে হয় প্রোটেক্টিং ইন্ডিয়া ফ্রম ইন্ডিয়ানস!
দম আটকে আসে, আবার খোলা হাওয়ায় দম নেয় অনেকে।

আমি এক অর্বাচীন! বুড়ো হাবড়াদের দলে,
তোমাদের কলরব মুখরিত এই পার্কের একপাশে, মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ ;
আজ শোকস্তব্ধ আমি !
বুঝি আমি রাত পোহালো, বুঝি যে পূবের আলো,
আমাকে তোমরা দিলে শহরের নরম মাটি, আভিজাত্যের আস্তানা
আমি তোমাদের দিয়েছি সন্ধ্যাফুলের মিষ্টি মধু,
দুপুর পাতার ঠান্ডা ছায়া, আর নিশুতরাতের স্তব্ধ মায়া ;
আমি স্বজাত্যের অহমিকা আঁকড়ে ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পার্কের এককোণে,
যেন দারিদ্রের অহঙ্কারে জর্জরিত ভিখিরী বুড়ির লোটা কম্বল সম্বল করে পড়ে থাকা ।
তবে এক লহমায় দেখে নিলে নজর কাড়ি সকলের ।
কিন্তু কথা ছিল ভেসে যাবো এই বাটে, তোমাদের কলকাকলিতে, হাসিতে,
পাখির গানেতে, পথের ধূলোতে, ধোঁয়াতে ;
আর তোমাদের খালি দিয়ে যাবো একরাশ প্রাণবায়ু,
আর হাত ভর্তি করে একমুঠো সবুজ ।

বিগত কত শতকের দোল-দুর্গোত্সব, কত মেলা, চড়ুইভাতি, সভা, মিটিং,
কত না বলা প্রেম, কত অপেক্ষার সাক্ষী হয়ে র‌ইল আমার মৌনতা !
আমি কাঁদলাম আর হাসলাম ;
জীবনপুরের পথিকের পসরা নিলাম ভাগ করে ।
আজ বৃষ্টি এসে মেশে আমার চোখের জলে, আজ শিশির এসে পড়ে আমার শুকনো ফলে,
একদিন নিষ্ঠুর নিয়তি এসে করাত চালাল আমার শরীরে, নবকিশলয় আজো আমার অঙ্গের ভূষণ ।
আমি পুরোটাই বাঁচতে চেয়েছিলাম তোমাদের মধ্যে,
আজ আমার একহাতে মুষ্ঠিবদ্ধ লোহার রেলিং আর এক হাতে আমার অঙ্গীকার !

ওগো তিলোত্তমা ! তোমার রূপের বড় অহংকার !
চেয়ে দেখ একটিবার !
আষ্টেপিষ্টে বেঁধেছি নিজেকে,
জড়িয়েছি ম্যাডক্সের মায়ায়, স্কোয়ারের কোণায়,
শুধু একটু বাঁচতে দাও আমায় !


Wednesday, December 2, 2009

তুমি এলেনা


############################################################



ফোনটা বেজে গেল একবার, দুবার, তিন বার...
কেটেও গেল নিজে নিজে, তুমি ছুটে গিয়ে ধরলে না তো!
আমার ছেঁড়া ক্যানভাসে আমি নীরবে আজ এঁকে চলি
আমার অধরা প্রেমের মাধুরী ;
পথ আমাকে বয়ে নিয়ে চলে একঘেয়েমির রাস্তা,
সময়ের খেয়া আমাকে পার করে দেয়,
উল্টে দেয় ক্যালেন্ডারের পাতা,
প্রকৃতির ঋতুবৃত্ত সমাপ্ত হয় ঠিক সময়ে,
আমার কালের মন্দিরা আমি একলা বাজিয়ে চলি,
প্রতিদিনের রোজনামচার ফাঁকে ফাঁকে,
তুমি এসে ধরা দাও একবার করে ;
আনমনা বর্ষায়, উদাসী বসন্তে,
কখনো স্বপ্নের সূতো ছিন্ন করে ঘুম ভাঙা ভোরে,
কখনো কল্পনার ঘুঁড়ির সূতোয় রাতজাগা ঘরে,
আমি শেষ হেসেছিলাম,
যেদিন তোমার আকাশ আমার আকাশে
মিশিয়েছিল তার নীল,
আমি সাগরের সব জলটুকু দিতে চেয়েছিলাম তোমায় ;
ঘাসের সব সবুজটুকু দিয়ে হতে চেয়েছিলাম নতুন কবি,
শুধু তোমার জন্য।
ধানক্ষেতের সব হলুদটুকু জমিয়ে,
একখানা আটপৌরে শাড়ি কিনেছিলাম তোমার জন্যে,
দেওয়া হল না...
ফোনটা বেজে গেল একবার, দুবার বহুবার....

##############################################

Photograph by Ajoy De

Friday, November 27, 2009

জয় গোস্বামীর নতুন ব‌ই "জলঝারি"


জয় গোস্বামীর নতুন ব‌ই "জলঝারি" পড়লাম প্রথমবার জলঝারির ক'ফোঁটা জল আমার গায়ে পড়তে না পড়তে ই বাস্প হয়ে মিশে গেল হাওয়ায় পরের বারে ঠান্ডা জলে সিক্ত হয়ে আমার একটু কাঁপুনি এল! শেষ বারের সবজলটুকু চেঁচে পুঁছে নিয়ে আমি মেখে নিয়েছি আমার মনের গায়ে জলঝারির জল পড়ে ঝরাপাতা আজ নড়ে উঠেছে! হোক না সে বাগানের ঝোপের কোণে
পড়ে থাকা ফেলে দেওয়া এক জলঝারি, থাকনা তার মরচে পড়া বিবর্ণতা ! আমাদের মতো ঝরাপাতাদের দলে যারা তাদের জন্য এই জলঝারির পড়ে থাকা জলটুকু অনেক কবি মুখবন্ধে নিজেই বলেছেন, যেসব সম্পর্ক নারী-পুরুষ কে প্রকাশ্যে আনতে পারেনা অথবা প্রকাশ্যে এলেই ঝড়-তুফানে তা ধ্বংসেই বিলীন হয়ে যায় সেই সব সম্পর্ক নিয়েই কিছুটা গদ্যে এবং কিছুটা পদ্যে লেখা এই "জলঝারি" ব‌ইটিতে জলঝারি কবিতাটি অনবদ্য! আমাদের মত যারা জীবনকে খানিকটা এযাবত্কাল দেখে এসেছে, বিশ্বাসের ভেলায় চড়ে ভেসে ভেসে খানিকটা উপলব্ধি করে এসেছে, সম্পর্কের টানাপোড়েনে যারা জীবনের জলছবি আঁকতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে তাদের জন্য এই জলঝারি

প্রথম গল্প "ভুলভুলাইয়া" নি:সন্দেহে শিউলির নস্টালজিয়াকে মনে করিয়ে দেয় নতুন করে, কিন্তু তার চেয়ে ও সুন্দর লেখকের শব্দ নিয়ে ভেলকি দেখানো, যেখানে তাঁর একদিকে প্রকৃতি প্রেম অন্যদিকে প্রেমের জোয়ারে ভাসমান অবস্থায় কিশোরীটির একদিকে ঝগড়া করতে পারা অন্যদিকে "শিউলি পারা", "উঠোন পারা", "ভোর পারা" এই ভাবে ভালোলাগা গুলিকে বর্ণনা করা খুব নতুন ধরনের তারপরে যখন মেয়েটি আরো বড় হয়েছে সেই প্রেম তার ততদিনে উধাও তাই সে বলে "আজ আমার ভোরও ঘটেনা, শিউলিও ঘটেনা, উঠোনও ঘটেনা" অর্থাত কিশোর প্রেমে এই গুলি ঘটতো | সে ও তখন প্রেম কে আঁকড়ে ধরে ভোর, শিউলি এবং উঠোন কে চাইতো ; এখন প্রেম না থাকায় তার জীবন ননরোম্যান্টিক জীবনে পর্যবাসিত হয়েছে

"আমাদের পাখিগুলি হবে" তে রাগ-রাগিনীর মধ্য দিয়ে যাত্রাপথের বর্ণনা নতুন ধরনের যেমন "ভীমপলশ্রীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, পৌঁছবো পুরিয়া ধ্যানেশ্রীতে " এর থেকে আমরা পাই সঙ্গীতানুরাগী জয় গোস্বামীকে

"চিহ্ননাম" শুরু একটি মনছুঁয়ে যাওয়া কবিতা দিয়ে শেষ কিছুটা গদ্যে আবার আবিষ্কার করি কবিকে...মনে মনে বলি, "তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে" চিহ্ননামের ঘুড়ির সুতো ধরে পৌঁছে যাই গল্পগদ্যে ব্যর্থপ্রেমের ভার বয়ে চলেছে কেউ একজন ; তার প্রেমিকা আজ বিবাহিতা আর স্মৃতির ক্যানভাসের একটি করে পাতা ওলটায় সেই ব্যক্তিটি রোমন্থন করে প্রেমিকার সাথে তার প্রথম প্রেমের সুখস্মৃতি শালীনতা, রক্ষণশীলতার লক্ষণরেখা কে মুছে দিয়ে কেন তাদের প্রেম প্রকাশ্যে আসবে না সেই নিয়ে বিষাদসিন্ধুতে ভাসিয়ে দিলেন প্রেমিকাকে লেখা কবিতা

"কড়ি ও কোমল" গল্পে আমরা শান্তিনিকেতনের ভুবনডাঙা পেরিয়ে শান্তিনিকেতনের চেনা পথঘাট দিয়ে সাইকেলে দুই যুবক-যুবতীর আলাপচারিতা বেশ লাগে রুদ্রপলাশ, পূর্বপল্লীর গেষ্টহাউস, রাঙামাটি হোটেল, গোয়ালপাড়ার পথ ধরে খোয়াই নদীর ধারে এসে খোয়াই কে নিজের করে চাওয়া ঠিক যেন আমার চাওয়ার মত তবে মেয়েটির খোঁপাতে ধনেপাতা গোঁজাটা একটু অন্যকিছু হলে ভালো হ'ত কারণ শক্তডাঁটি না হলে পাতা গুঁজবে কি করে? প্রান্তিকের ক্যানালের ধারে, তাদের প্রেমালাপ, অজয়নদরূপী উদাস বাউলের সাথে মেয়েটির ফ্যান্টাসি ভালো তবে শুদ্ধ-কোমল স্বরের ব্যঞ্জনা খানিকটা একঘেয়েমি এনে দেয় শান্তিনির সব নৈসর্গিক সম্পত্তি এমন কি গোয়াল পাড়ার ঢোলকলমি থেকে শুরু করে সোনাঝুরির সব পাতা তিনি দিতে চেয়েছেন প্রেমিকাটিকে উজাড় করে সেখানে মেয়েটির শুদ্ধাশুদ্ধ না আনলেও চলত ভালোবাসা যদি নিখাদ হয় সেখানে শুদ্ধতা যাচাইয়ের তো প্রয়োজন নেই অবশ্য এখানে তাঁর পোয়েটিক লাইসেন্সকে আমি অস্বীকার করি না

"কাঁটাতার" পড়ে মনে হ'ল এক অপূর্ব বাস্তবতার চিত্র এঁকেছেন কবি, লেখক শিল্পী জয় গোস্বামী সব সম্পর্কের মধ্যে তিনফুট ছাড় রাখাটা যে কতটা জরুরী সেটা নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছি আমি দুটি মানুষের মধ্যে যেকোনো সম্পর্কের ইতি ঘটে কাঁটাতারের বেড়া লঙ্ঘনের জন্য..এই জীবন দর্শন অনবদ্য সীমান্ত লঙ্ঘনের পরিণতি সম্পর্কে আমরা সকলেই সচেতন এবং অবৈধ সংসর্গের ক্ষেত্রে তার পরিসমপ্তি ঘটে আত্মহনন, বিচ্ছেদ ইত্যাদিতে কৌতুহলের এবং জ্ঞান-উপদেশের তীর বিদ্ধ হয়ে, সমাজবৃত্তে থেকে একঘরে হয়ে হীনমন্যতার স্বীকার হতে হয় তাঁর মতে এই সব পরকীয়া প্রেম কাঁটাতারের বেড়া লঙ্ঘন না করে "নো ম্যানস ল্যান্ডে" থেকে ও চলতে পারে ; দুদেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী জায়গায় দুদন্ড দাঁড়িয়ে মনের কথা বলে আবার যদি ধীরে ধীরে ফিরে যাওয়া যায় অর্থাত দুপক্ষের কেউ জানালো না কথাটা, কেবল সেই সম্পর্কের টানাপোড়েনে জর্জরিত মানুষদুটি ছাড়া তাহলেও কিন্তু আমার মনে হয় "এই কুলে আমি আর ঐ কুলে তুমি"র মত মাঝখানে বিশ্বাসের সূতোটা আলগা হয়ে যাবে তবে হ্যাঁ, একথা স্বীকার না করে পারা যায় না, নিখুঁত লেখনীর বুনোটে "নো ম্যানস ল্যান্ডে" ডিঙি নৌকায় বসে কথা বলে চলে আসাটা নি:সন্দেহে উপভোগ্য

"বিরহ" গদ্যে আমরা আবার নতুন করে আবিষ্কার করি প্রেমের বিরহ যন্ত্রণাকে, যা নাড়িয়ে দেয় পাঠকমন কে সংসার কটাহ তলে জ্বলতে জ্বলতে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে ঘুমিয়ে পড়া প্রেমের মধ্যে থেকে নিভে যাওয়া বিরহের অবসর.. এ ধারণাও অসাধারণ

জলঝারির অনবদ্য রঙীন প্রচ্ছদ অলংকরণের পুরো কৃতিত্বটুকু প্রাপ্য কৃষ্ণেন্দু চাকীর ব‌ইটি সত্যি সত্যি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে জয় গোস্বামী আরও লিখুন আর আমাদের পাঠকমনকে নাড়িয়ে দিন এই কামনা করি
কিন্তু তিনি তো আজীবন শিল্পী, অবিসংবাদী কবি তাই তাঁর শেষ গদ্যের এই স্বীকরোক্তি "মধ্যবয়সের বিদ্বেষ চর্চার জ্বালা, প্রতিহিংসা বহন ও তার দাহ এসবের চেয়ে প্রেমের অভিশাপ বরং শ্রেয় " এই কথাটি মনে রাখার মত

Thursday, November 12, 2009

কালোমেয়ে

আমার উপন্যাসের নায়িকা শেষের কবিতার লাবণ্যের মত নয়,
আমার গল্পের নারী চরিত্র প্রথম প্রতিশ্রুতির সত্যবতীর মতও নয়,
আমার কল্পনার নারী অমরাবতীর ঊর্বশীরমত ওড়নায় মুখঢাকা কোনো দেহপসারিণী নয়,
কিম্বা রাঙামাটির পথ ধরে হেঁটে চলা আলুথালু বেশ, শুকনো কেশ কোনো নিষ্পাপ গ্রাম্যবালিকা নয় ;
কালবেলার মাধবীলতা নয়.. নয় সে নষ্টনীড়ের কুড়ানি
আমি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ; স্বপ্ন বেচি কাব্য লিখে ঘুমের মাঝে গল্প লিখে ...
আমার রঙীন নেশার স্বপ্নের নায়িকা কৃষ্ণকলি ..
সে কালোমেয়ে তাই কৃষ্ণকলি বলি আমি তাকে
জানো ? সে আমার মনের গহন বনে, লুকিয়ে থাকে আপনমনে,
রাত্রি শেষে ঘুমের মাঝে, ঘুমপাড়ানি গানের সুরে,
আমার কাছে দেয় সে ধরা, কোলে তোলে আপন করে
কৃষ্ণকলি পাশে বসে আমায় দেখে মুচকি হাসে
নয় সে কোনো বিম্ববতী, সুরধুনীতীরের কোনো বিরহিণী রাধারাণি
গাছ তলার নীচে চুঁইয়ে পড়া ক্ষীণ ঝোরার জলের শ্যাওলা পড়া পাথরের নীচে বসা,
কোনো আধফোটা কিশোরী নয়,
প্রকান্ড সোনাঝুরির ফ্যাকাসে কাঠের গুঁড়ির গায়ে হেলান দেওয়া প্রেমিকের জন্য প্রতীক্ষারত,
কোনো সদ্যকুসুমিত যুবতী নয়
সে একপিঠ কালোচুল এলো করে, সাঁঝের বাতি করে সাথী, চলে আসে রাতারাতি
কখোনো পূবের আলোর কনকোজ্জ্বল রক্তিমাভা দু কপোলে মেখে, কপালে মস্ত লাল সিঁদুরের টিপ এঁকে,
শোনায় ভোরের আগমনী
কম্বুকণ্ঠী কৃষ্ণকলি আমায় কবিতা শোনায়,
কাজলনয়না কৃষ্ণকলি আমাকে গান শোনায়
কখনো চাঁদের রূপোলী জ্যোত্‌স্না গায়ে মেখে, ছাদ আলো করে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়
মিষ্টি হাসি হেসে আমায় বলে, আমি যে তোমায় বড্ড ভলোবাসি, তাই তো তোমার কাছে ছুটে ছুটে আসি

Friday, November 6, 2009

জন নায়ক শ্রীকৃষ্ণ



মহাভারতের ইতিহাস, পুরাণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে ও ভারতীয় জ্যোর্তিবিজ্ঞানের সজ্গে তথ্যগুলিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করলে দেখা যায় যে মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব ৩০৬৭ তে এই সালটি তাত্পর্য পূর্ণ ও ভারতের ইতিহাসের কালঘন্ট নিরূপণে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য । মহাভারতের যুদ্ধের দিন স্থির করার প্রথম ধাপ হল পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তারিখ নির্নয় করা। ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণাষ্টমীর পুণ্যলগ্নে যখন সোমশুভ্র চন্দ্র, রোহিণী নক্ষত্রে পদার্পণ করেছে, সময় তখন মধ্যযাম, প্রকৃতি তখন ভরাভাদ্রের অনাবিল আনন্দে রোরুদ্যমানা; মহামানবের আগমনবার্তা ঘোষণার তাগিদে অবিরাম বর্ষণ করে চলেছে আনন্দাশ্রু | তখনই জন্ম নিলেন শ্রীকৃষ্ণ যার বৃষরাশিস্থ লগ্নে চন্দ্র ছিল বিরাজমান। জন্মের পূর্ব মূহুর্তে অন্যান্য গ্রহগুলির মধ্যে পাঁচটি তাদের তেজোদৃপ্ত রূপ প্রদর্শন পূর্বক তুঙ্গস্থানগুলিতে এবং বাকী দুটি যেন নিজেদের মহিমা দীপ্তি অবগুন্ঠন করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে আশ্রয় নিল। কেউ একটু শীঘ্র, কেউ একটু বিলম্ব করল তাদের আবর্তনের গতি। এর ফলস্বরূপ মহামানবের সম্মিলিত গ্রহ-নক্ষত্রের জন্মকালীন অবস্থান অর্থাত সম্পূর্ণ ছকটি হল এক ও অদ্বিতীয়। লগ্ন এবং চন্দ্র ৫২ ডিঃ ১৫মিঃ রোহিণী নক্ষত্রে বৃষ রাশিতে । দেবগুরু বৃহস্পতি ৯১ডিঃ১৬মিঃ পুনর্বসু নক্ষত্রে, কর্কট রাশিতে । মহাদ্যুতি সম্পন্ন নক্ষত্ররাজ ভাস্কর ১৪৮ডিঃ১৫মিঃ উত্তরফাল্গুনী নক্ষত্রে সিংহ রাশিতে । শশীসুত, বালখিল্য, সৌম্যমূর্ত্তি বুধ ১৭২ডিঃ৩৩মিঃ কন্যা রাশির হস্তা নক্ষত্রে। ভৃগুর পুত্র, সর্বশাস্ত্রজ্ঞ, দৈত্যগুরু শুক্র ১৮০ডিঃ১৫মিঃ তুলা রাশিস্থ চিত্রা নক্ষত্রে । রবির ঔরসজাত, ছায়ার গর্ভসম্ভূত, গ্রহরাজ শনি ২০৯ডিঃ৫৭মিঃ তুলা রাশিস্থ বিশাখা নক্ষত্রে। ধরণীর গর্ভসম্ভূত কুমারমঙ্গল ২৭০ডিঃ০১মিঃ মকর রাশিস্থ উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে। রাহু মেষরাশিতে ১৬ডিঃ০১মিঃ ভরণী নক্ষত্রে এবং কেতু তুলা রাশিতে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মসময় হল রাত ১১টা ৪০মি, শুক্রবার , ইংরাজি ২৭ জুলাই খৃষ্টপূর্ব ৩১১২ তে।[*]


মহাভারতের কাহিনীর আদিপর্বের শেষে আমরা কৃষ্ণের দেখা পাই দ্রৌপদীর স্বয়ংবরার বিশেষ শুভক্ষণেইতিমধ্যে কৃষ্ণ কংস নিধন করেছেন, যাদবরা কংসের শ্বশ্রুপিতা প্রবল পরাক্রমশালী জরাসন্ধের শত্রু হয়ে উঠেছে যমুনার তীর থেকে বিতাড়িত যাদবরা, সমুদ্রতটে দ্বারকানগরীতে রাজ্য স্থাপন করেছে যেখানে স্বয়ং দ্বারকাধীশ শ্রীকৃষ্ণ রাজত্ব করছেন দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় রাজা রাজড়া উপস্থিত হয়েছেন হাজির হয়েছেন দ্বারকারাজ শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর দাদা বলরাম---- দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত হওয়ার তাগিদে এদিকে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন ব্রাহ্মণবেশী পঞ্চ পাণ্ডব যদিও আত্মীয়তার সূত্রে কৃষ্ণ আবদ্ধ এদের সাথে,তবুও দরিদ্র ব্রাহ্মণের বেশভূষা দেখে এদের প্রথমে চিনতে পারেন নি তিনি এবার তদানীন্তন ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর অর্জুনের শর নিক্ষেপের সাফল্যে উদ্বেলিত কৃষ্ণ পাণ্ডবদের পরিচিতি বুঝতে পারলেন ঠিক এমনটি ই যেন চেয়েছিলেন তিনি প্রাণাধিক পার্থ'র জন্য কৃষ্ণা দ্রৌপদী ই তো নির্ধারিত হয়ে রয়েছে কিন্তু দ্রৌপদীর এত বিশাল সৌভাগ্য! না, পর্ণকুটিরে ফিরে এসে মাতৃ আজ্ঞাবহ পঞ্চপাণ্ডব একটি ফলের ন্যায় ভাগ করে নিলেন অর্জুনের পরম আকাঙ্খিত ,প্রিয়তমা নবোঢ়া কে দ্বারকাধীশ, পিতৃস্বসা পৃথা কে শুভকামনা জানিয়ে পুনরায় ফিরে এসেছেন দ্বারকায় শুধুমাত্র ক্ষণেকের উপস্থিতি, শুধু একটুকু ছোঁয়া দিয়ে দ্রুপদের রাজসভায় ক্ষণিকের অতিথি শ্রীকৃষ্ণ, সামান্য কৃপার দ্বারা বদলে দিলেন পাঁচ দরিদ্র ব্রাহ্মণভ্রাতার জীবন পাঞ্চালী কে লাভ করে তাঁরা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেন নির্মাণ হল ইন্দ্রপ্রস্থের রাজনগরী, রাজন্যবর্গের মধ্যে পঞ্চপাণ্ডব ,তাঁদের বীরত্ব, সততা, সাহস, সুকর্মের দ্বারা এবং সর্বোপরি রাজসূয় যজ্ঞের মাধ্যমে বিপুল খ্যাতি অর্জন করলেন শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের জোগালেন শুভবুদ্ধি,চালনা করলেন শুভপথে কিন্তু পাণ্ডবদের প্রতি কৌরবপক্ষের আমরণ অসূয়া এবং শ্রীকৃষ্ণের পাণ্ডবদের জন্য সদা ব্যাকুলিত হৃদয়, কৌরবদের ঈর্ষাকে উত্তরোত্তর বাড়িয়ে দিয়েছিল যার ফলস্বরূপ ভারতবর্ষের ইতিহাসে রচনা হয়ে গেল ভয়াবহ সেই ঘটনাবহুল যুদ্ধ, কুরুক্ষেত্রের প্রাঙ্গণে দীর্ঘ আঠারো দিন ব্যাপী বয়ে চলল শোণিতের স্রোত, আর শ্যেন-শকুনের সোরগোলে সরগরম রণক্ষেত্রে কেবল পড়ে রইল শৃগালের অট্টহাসি, স্বামীহারানো নারীদের ক্রন্দন, আর পুত্রহারা ময়েদের বিলাপবহুল আর্তনাদ শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে দূত রূপে অবতীর্ণ হয়ে পাণ্ডব ও কৌরবদের শুভবুদ্ধি উজ্জীবিত করে এই ভীষণ যুদ্ধকে এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু উভয়পক্ষের সমঝোতা হ্'ল না অবশ্যম্ভাবী যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল কারণ সর্বশাস্ত্রজ্ঞ , ভবিষ্যতদ্রষ্টা কৃষ্ণ বুঝেছিলেন যে যুদ্ধ বিনা গতি নেই তাই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অনুঘটক রূপে কাজ করে ছিলেন তিনি তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে সকলের উদ্দেশ্যে প্রক্ষিপ্ত "মা ফলেষু কদাচন" --এই বাণীর সত্যতা ব্যর্থ হয়ে যাবে সেখানেই তাঁর সার্থকতা একজন কূটনৈতিক রাজনীতিবিদ হিসাবে

কিন্তু কি লাভ হ'ল? যুদ্ধের পরিনামে শ্মশানের শ'য়ে শ'য়ে জ্বলন্ত চিতার লেলিহান শিখায় পুড়ে ভস্মীভূত হ'ল অধোগতি মানুষের কলঙ্কিত,পঙ্কিল,পরশ্রীকাতরতা,ঈর্ষাপরায়ণতা, কলহপ্রবণতা, নীচতা,মূর্খতা আর যা কিছু ঘৃণ্য সবকিছু শাস্ত্রকারের ভাষায়, ধর্মগ্লানি হলে অধর্মকে বিনাশ করার জন্য,ধর্মকে পুনরায় স্থাপন করার উদ্দেশ্যে ভগবান, অবতারের রূপ ধরে এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে থাকেন | অবতার ভগবানের একটি অংশ মাত্র বিশেষ বিশেষ যুগে বিশেষ বিশেষ ধর্মগ্লানি হয় তাই যুগের প্রয়োজনে ,ভিন্ন ভিন্ন রূপে তিনি অবতীর্ণ হ'ন এবং তাঁর বিচিত্র রূপ ও শক্তির প্রকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে

মহাভারতের রচয়িতা বিশালবুদ্ধি ব্যাসদেব কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকে কেবলমাত্র অবতার বলে অভিহিত করেন নি শৌর্য,বীর্য,ত্যাগ,প্রেম,অনাসক্তি এবং অন্যান্য দিব্যগুণে বিভূষিত কৃষ্ণকে 'কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং' [#] বলে চিহ্নিত করেছেন

সাধারণ মানুষের কৃষ্ণচরিত্র সম্বন্ধে যে ধারণা আছে অর্থাত গোপিনীদের প্রেমিক কৃষ্ণ ,বংশীধারী,রাখালবালক রূপী কৃষ্ণ --এ সবের চেয়ে কৃষ্ণচরিত্র অনেকটাই ঊর্ধে সকল অবতারত্বের সারটুকু দিয়ে তৈরী তিনি, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সার্বজনীন নেতা জগতের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত প্রাণ তাঁর যাঁর জন্য ধৃতরাষ্ট্রের পরামর্শদাতা সঞ্জয় উজাড় করে দিয়েছিলেন একরাশ স্তবকুসুমাঞ্জলি যার অনুরণনে ধৃতরাষ্ট্রের সভাগৃহ একদিন হয়ে উঠেছিল কৃষ্ণ-স্তবস্তুতির এক মন্দির

তিনি জগতের শ্রেষ্ঠ বলে 'বসু'ও দেবের ও কারণ বলে 'দেব' অর্থাত বাসুদেব, তিনি বিশ্বের বিস্তার বলে বিষ্ণু, মায়াকে দূর করেন বলে মাধব, মধু নামক দৈত্যের হন্তারক বলে মধুসূদন, 'কৃষ্' মানে সত্তা আর 'ণ্' এর অর্থ হল আনন্দ-- এই দুয়ের সমারহে তিনি কৃষ্ণ শ্বেতপদ্মের ন্যায় আঁখি বিশিষ্ট বলে তিনি হলেন পুণ্ডরীকাক্ষ, 'জন' নামক অসুরের দমনকর্তা বলে জনার্দন, সত্ত্বগুণ থেকে বিচ্যুত নয় বলে সাত্ত্বত আবার যশোদা কর্ত্তৃক দাম অর্থাত রজ্জু দ্বারা উদরে আবদ্ধ হয়েছিলেন বলে তিনি দামোদর, নরগণের মুক্তির স্থান বলে নারায়ণ, পুরুষের শ্রেষ্ঠ বলে পুরুষোত্তম | তিনি ই সব বলে সর্ব,সত্যে প্রতিষ্ঠিত বলে 'সত্য'

যাঁর সহস্র কিরণের ছটায় একদা আলোকিত হয়েছিল সনাতন ভারতভূমি যিনি ধর্মরাজ্য স্থাপনের বাণী প্রচার করেছিলেন সমগ্র ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে তাঁর পাঞ্চজন্যের বজ্রনিনাদে অনুরণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধপ্রান্তর চতুর্দিকে অধর্মের বিনাশ আর ধর্মের উত্থানের কম্পন অনুভব করলেও তা ছিল সাময়িক নতুন ধর্ম রাজ্যের নবজাগরিত মনুষ্যগণের রাজা হলেন জ্যেষ্ঠ পান্ডব যুধিষ্ঠির ,যিনি আজন্মকাল ধর্মরাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন , কিন্তু সত্যি ই কি ধর্মরাজ্য স্থাপিত হয়েছিল ভারতবর্ষে? যা হয়েছিল তা হল নিতান্ত ই এক শূন্যতায় পূর্ণ অলীক কল্পনামাত্র যার নেপথ্যের নায়ক ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং | যুদ্ধের পরে পড়ে রইল কিছু ক্ষমতাহীন প্রতিবন্ধী মানুষ, কিছু ক্ষমতাশীল, ছদ্ম গাম্ভীর্যপূর্ণ মানুষ আর কিছু নপুংসক,মেরুদণ্ডহীন পুরুষ যারা রাজনীতির ভন্ডামিকে পাথেয় করে ,'মাত্সন্যায়' এর নীতিকে আঁকড়ে ধরে বুজরুকির ভেলকি দেখিয়ে সমগ্র জাতির কান্ডারী হল ফলে সামাজিক অবক্ষয় হতে শুরু হল, মানুষ আরো অন্ধকারের পঙ্কে নিমজ্জিত হয়ে বেঁচে রইল এইখানেই কলিযুগের সূচনা এক মূহুর্ত কালবিলম্ব না করে কলিযুগ নির্দিষ্ট সময়েই হাজির হল ভগবান কৃষ্ণও স্বয়ং পারলেন না সেই কালচক্রের অমোঘ গতিকে রুদ্ধ করতে এখানেই তাঁর মতো রাজনৈতিক অবতারের ব্যার্থতা কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনো আমরা তাঁকে স্মরণ করি কেন? কারণ পৃথিবীতে কেউ কেউ সেই অলৌকিক শক্তি র অধিকারী হয়ে মাঝে মাঝে এসে ধরাধামে অবতীর্ণ হ'ন, সাধুদের পরিত্রাণ আর দুষ্কৃতদের বিনাশ ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের ত্রাণকর্তা রূপে

বাস্তবিক জীবনে আমরা শুনেছি দুটি বিশ্ব যুদ্ধের কথা,দেখেছি তার ফল, এখন তৃতীয়টির অপেক্ষায় দিন গুনছি কিন্তু একদা অন্ধকারের মধ্যে আলো দেখিয়েছিলেন যিনি সেই প্রবাদপুরুষ পার্থসারথির বাণী কে পাথেয় করে এখনো আমরা সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যে লড়াই করে এগিয়ে চলেছি কারণ কর্ম ই জীবন ফলের আশা করবো না, সর্বতোভাবে আত্মনিয়োগ করবো কর্মযজ্ঞে শ্রীমদ্ভাগবত্গীতার শাশ্বতবাণী কে মাথায় করে ,"আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা চল রে"-এই মন্ত্রে দুর্গমগিরি,দুস্তর মরুপ্রান্তর লঙ্ঘন করবো



(*) “The Date of the Mahabharata War”, K Srinivas Raghavan, 1969, Srinivas Gandhi Nilayam, Srigam Press, Madras 18. Available at Adyar Library Chennai.

[#] উদ্যোগপর্ব (৬৬/৪৭)

Monday, October 26, 2009

দ্রৌপদী এবং সীতা -- দুই বিতর্কিত নারী চরিত্র

মহাভারত ও রামায়ণ, এই দুই মহাকাব্যের দুটি অবিসংবাদিত নারী চরিত্র হল যথাক্রমে দ্রৌপদী ও সীতা । এঁরা দুজনেই ভূমিকন্যা; দ্রৌপদী যজ্ঞাগ্নি সম্ভূতা এব্ং সীতা লাগ্ঙল চালনার ফলে ভূমি থেকে উত্পন্না । এরা উভয়েই রাজনন্দিনী। বিবাহের জন্য স্বয়ংবরা হযে দুই মহাকাব্যের সবচেযে বীরত্বপূর্ন রাজপুরুষ কে স্বামীরূপে লাভ করেছিলেন |মহাভারতের যুগে অর্জুন ও রামায়ণের যুগে রাম অপেক্ষা বড়ো ধনুর্ধর আর কেউ ছিলেন না। বিবাহের পরে স্বামীসহ দ্রৌপদীর হয়েছিল তের বছর অজ্ঞাতবাস, সীতার চৌদ্দবছর বনবাস। যার ফলে উভয়ের জীবন হযেছিল ঝঞ্ঝাটময়, বিপদগ্রস্ত ও অশান্তিপূর্ন। আর যার ফলস্বরূপ রাজবধূ,রাজনন্দিনী সীতা ও দ্রৌপদী উভয়েই হযেউঠেছিলেন দুইটি অসুখী সংসারের দুই তিতিবিরক্ত নারী।


এত সাদৃশ্যপূর্ন দুই নারী চরিত্র কিন্তু ছিল বৈসাদৃশ্যে ভরা। সাহিত্যের পরম্পরা অনুযাযী এই দুই পৌরাণিক মহাকাব্য প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।কিন্তু মহাভারত হল ইতিহাস | রামায়ণ হল কাব্যগ্রন্থ। মহাভারতের চরিত্রগুলির বিন্যাস, বিভিন্নতা বৈচিত্রপূর্ন। আমাদের সমাজের মত সেখানে যেমন আছে নায়ক তেমনি আছে খলনায়ক। সত, অসত, মূর্খ, জ্ঞানী, সুন্দর, কুত্সিত এ সব ধরনেরই চরিত্র স্থান পেযেছে সেখানে, কিন্তু রাময়ণের কাব্যকার প্রাধান্য দিযেছেন কেবল ই আদর্শবান চরিত্রগুলোকে।সৃস্টি করেছেন আদর্শ মানুষ কে , আদর্শ নারীকে , আদর্শ ভ্রাতাকে অথবা আদর্শ খলনায়ককে। রামায়ণ মুখ্যত একনায়কের কাহিনী, নায়ক রামচন্দ্রের আদর্শের উপস্থাপনা ও মাহাত্ম্যকীর্তণ স্থান পেয়েছে সেখানে।


রামচন্দ্র লাভ করেছিলেন কোমল-পেলব-নিষ্পাপ নিষ্ঠাবান রূপবতী জনক-নন্দিনী কে। চারিত্রিক দৃঢ়তা দিয়ে রাম নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন আদর্শ পুত্র বা ভ্রাতা হিসেবে,আদর্শ স্বামীরূপে নয়। যার জন্য সন্তানসম্ভবা সীতা হযেছিলেন আশ্রমবাসিনী। দুঃখে, শোকে, লজ্জায় চরম অপমানিতা হয়ে পুনর্বার প্রবেশ করেছিলেন ভূগর্ভে।সীতার পিতা জনক রাজা না কি মহত ছিলেন- একথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু কার্য কালে জনকের মহত্ত্বের কোনো প্রকাশ দেখিনা। রামায়ণে রাজকন্যা সীতার খোঁজ নিতে , বা তাকে বিপদের সময় সাহায্য করতে বা তাকে উদ্ধার করতে তাঁর পিতৃকুলের কেউই এগিয়ে আসেননি সেদিন। অপর দিকে দ্রৌপদীর পিতা পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ বহু আকাঙ্খিত পুত্র লাভের আশায় যে যজ্ঞ করেছিলেন সেই যজ্ঞের অগ্নিসম্ভূতা কন্যা হলেন আদরিণী দ্রৌপদী, যিনি কখনো কৃষ্ণা, কখনো বিদেহী , কখনো পাঞ্চালী, কখনো বা যাজ্ঞসেনী। অতএব এ যুগের একমাত্র কন্যার মত সে যুগেও নাম নিয়ে কত আদিখ্যেতাই না হয়েছিল দ্রৌপদীর! আবার মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দ্রৌপদীর ভ্রাতা ধৃষ্টদ্যুম্ন পঞ্চপান্ডবের পক্ষে প্রধান সেনাপতির ভুমিকা নিয়েছিলেন। ঠিক যেমন এখনকার কালে আদরের একমাত্র বিবাহিত বোনের বিপদে আপদে ভগ্নীপতির পাশে এসে দাঁড়ান তাঁর ভ্রাতা। অভাগিনী সীতা কি তাহলে অবাঞ্ছিতা? যার জানকী বা সীতা অর্থাত্ "লাঙল চিহ্নিত রেখা" ছাড়া অন্য কোন আদরের নামও জোটেনি। যদিও দ্রৌপদী রাজা দ্রুপদের এবং জানকী রাজা জনকের পালিতা কন্যা ছিলেন।


কৌরবদের চক্রান্তে ধাবিত, ছদ্মবেশী পঞ্চপান্ডব দ্রুপদের রাজসভা থেকে দ্রৌপদীর ন্যায় রূপবতী ও গুণবতী স্ত্রীধন লাভ করে রাজকন্যা ও রাজত্ব ছাড়াও পেয়েছিলেন সামাজিক মর্যাদা। অন্যথায় রামচন্দ্র নিজ পরিচয়ে রূপবতী সীতাকে লাভ করে বরং সীতার রাজমর্যাদাই এক ধাপ বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন-- এর বেশি কিছুই নয়। হ্যাঁ একথা অনস্বীকার্য যে সীতা ছিলেন কেবল-ই রামের সম্পত্তি। কিন্তু দ্রৌপদী ছিলেন বহুবল্লভা, নাথবতী অনাথবত-- পঞ্চপান্ডবের সম্পত্তি। এবং সম্ভবত এই কারণেই পান্ডবভ্রাতাদের মধ্যে একতা, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ কে দ্রৌপদী তাঁর জীবনের শেষ পর্যন্ত এক সুতোয় গেঁথে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর জন্য ই পান্ডবরা বুঝতে পেরেছিলেন যে একতাই বল।


আক্ষরিক অর্থে উভয়েরই বনবাস হয়েছিল। দ্যূতক্রীড়াসক্ত স্বামী রাজ্যপাট হারিয়ে দ্রৌপদীকে বাধ্য করেছিলেন বনবাসিনী হতে। অন্যথায় সীতার বনবাস ছিল তাঁর আদর্শ স্বামীর সত্যরক্ষার প্রতীক স্বরূপ। দ্রৌপদী বনবাসে থাকাকালীন অবস্থায় আগের মতই তাঁর পাঁচ স্বামীর প্রতি যথোচিত কর্তব্যপরায়্ণা ও নিষ্ঠাবান ছিলেন। তাঁর সপত্নীগণ সেই সময় তাঁদের নিজ নিজ পিত্রালয়ে সুখেই কালাতিবাহিত করেছেন। দ্রৌপদী তাঁর সপত্নীদের প্রতি বিন্দুমাত্র ঈর্ষাপরায়ণ না হয়ে যেমন সুসময়ে তাঁদের পাশে ছিলেন, ঠিক তেমনই দুঃসময়েও তাঁদের অনবরত মনোবল ও সাহচর্য যুগিয়ে গেছেন।


অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন দাদা ধৃষ্ট্দ্যুম্ন যখন দ্রৌপদীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, তখন তিনি ছোট্ট এক বালিকার মত নিদারুণ অভিযোগের সুরে ডুকরে কেঁদে উঠে বলেছিলেন "আমার কি স্বামী, ভ্রাতা, পিতা কেউ নেই ?থাকলে আজ রাজসভায় বিবস্ত্রা হয়ে এমন অপমান সইতে হত না।" কিন্তু হায় অসহায়া অভাগিনী ভারতের নারী! কত লাঞ্ছনা ও অপমান সহ্য করেও স্বামী বা ভ্রাতাকে পরিত্যাগ করেননি তিনি। তাঁর দুঃসময়ে পাশে এসেছেন সেই প্রবাদপুরুষ পার্থসারথি যিনি আগাগোড়া মনোবল যুগিয়েছেন শুধু দ্রৌপদীকেই নয় প্রণাধিক প্রিয় অর্জুন সহ বাকি চার পান্ডবকে। শোকে দুঃখে, অপমানে অবিচলিত সেই পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের জন্য্ই পান্ডবরা কুরুক্ষেত্রে জয়লাভ করেছিলেন। ন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ধর্মরাজ্য গড়ে তোলার অমোঘ বাণী প্রচার করেছেন। পাঞ্চজণ্যের বজ্রনিনাদে অনুরণিত হয়েছে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার বাণী। সেই অনুরনণে অবিচলিত দ্রৌপদী হাল ছাড়েননি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। শ্রীকৃষ্ণের কৃপাধন্যা দ্রৌপদীর উদ্দেশ্যে বর্ষিত হয়েছে তাঁর অগণিত স্নেহবারি। তাঁর ধৈর্য্য , সহ্য ,মনোবল এব্ং আত্মপ্রত্যয় প্রশংসার দাবী রাখে। সেই কারণে দ্রৌপদী পঞ্চকন্যার সঙ্গে স্মরণ্যা ও বরেণ্যা।


অন্য দিকে অযোধ্যায় পৌঁছায়নি যুদ্ধের দাবানল। বনবাসে বিন্দাস রামচন্দ্র, সীতার সঙ্গে নিভৃতে ঘটনাবহুল মধুচন্দ্রিমা যাপনের রঙ নিয়ে তুলিতে টান দিয়ে পাড়ি দিয়েছেন সুদূর লঙ্কায়। রাবণের হাত থেকে সীতাকে রক্ষা করেছেন ও রাবণ বধ করে বীরত্বের তুঙ্গে পৌঁচেছেন। আক্ষরিক অর্থে সীতার যথার্থ ই হিরো তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। প্রজারঞ্জনের জন্য ও লোকলজ্জা এড়াতে সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বাধ্য করেছেন ও শেষ পর্যন্ত তাঁকে পাতালে প্রবেশ করিয়ে ছেড়েছেন। সেখানেই কি রামের জয় ও সীতার পরাজয়? না কি আদর্শবান রাজার স্ত্রী অপেক্ষা প্রজারঞ্জনকে প্রাধান্য দেবার ফলে নিরপরাধ, অসহায়, অবলা সীতার লজ্জায় এহেন পলায়ন হল। কোন দেবদেবীর আচমকা প্রবেশ বা কোন প্রাকৃতিক শক্তিও সেদিন রক্ষা করতে পারেনি সীতাকে।


দ্রৌপদী ও সীতা উভয়েই বিস্তর ভুল করেছিলেন এবং সেই জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই ভুলের মাশুলও দিতে হয়েছিল তাঁদের। সীতার ভুল হল মায়াবী সোনার হরিণের হাতছানিকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং রাবণের বোন সুর্পনখাকে দেখে ব্যঙ্গ করা। যার ফলে তিনি হলেন রাবণের দ্বারা অপহৃতা ও যা পুরো রামায়ণের গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। অন্যদিকে দ্রৌপদীর ভুল হল, ময় দানব নির্মিত, স্ফটিক খচিত ইন্দ্রপ্রস্থে দুর্যোধনের প্রথম পদার্পণেই পা পিছলে যাওয়া দেখে হেসে ফেলা। পরবর্তী কালে এর চেয়ে অনেক বেশি অপমান তাঁকে ফিরে পেতে হয়েছিল। যেখানে আমরা দেখি, দুঃশাসন তাঁকে বল প্রয়োগে তাঁর বস্ত্র ধরে টেনে এনে ছিল রাজসভায় ও সেখানে বিবস্ত্রা নারীর শরীরী বিভঙ্গ উপভোগ করেছিল এক পাল মেরুদন্ডহীন পুরুষ।


তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে মহাভারতের শেষে পঞ্চপান্ডবসহ দ্রৌপদীর মহাপ্রস্থানের সময় একমাত্র মহাবল ভীমসেন ই দ্রৌপদীর পাশে ছিলেন এবং দ্রৌপদী যেন ভীমকেই পরজন্মে স্বামীরূপে পান-- এরূপ আশা নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রামায়ণে সীতার পাতাল প্রবেশ বা অগ্নিপরীক্ষার সময় কোন প্রবাদ পুরুষ তাঁকে রক্ষা করতে আসেননি। বরং তাঁর করুণ অবস্থা দেখে ধরণীগর্ভসম্ভূতা সীতা যেন ধরণীর গহ্বরেই বিলীন হয়ে যান-- এরূপ দৈববাণীই ছিল উপযুক্ত।

.....................................................................................................
সোনার তরী দুর্গোত্সব কমিটির দ্বারা প্রকাশিত "স্মরণিকা" ২০০৬



Wednesday, October 21, 2009

মরুভ্রমণ যদিও অধরা তবুও মধুর!!!


আসলে সেই অর্থে মরুভ্রমণ হয়নি এবার। আমার ছেলে রাজস্থানের একটি কলেজে এই বছর ভর্ত্তি হয়েছে...তাই সে তো আসতে পারবে না ...তাই আমাদের যাওয়া..তবে কলকাতার ভীড় ছেড়ে পালিয়ে কিছু খারাপ লাগেনি..বরং একটু অন্যরকম দীপাবলী হল এবছর । ময়ূর, টিয়াপাখি, বকের সারি, নিম গাছের এভিনিউ, ঊটের সঙ্গে পথ হাঁটা, কাঠবেড়ালির পায়ে পায়ে লুকিয়ে পড়া, এই সব আর কি ...মাটি থেকে ২৫০ মিটার উঁচুতে সংকটমোচন মন্দির দেখতে গেলাম । বাজিপোড়ানো দেখলাম কলেজের ক্যাম্পাসে । প্রচুর আলো দিয়ে সাজানো কলেজের ঘড়ি-স্তম্ভ...আলো আলো আর শুধু আলোর রোশনাই ..কিন্তু সাথে নীরবতা..এক অপূর্ব নৈসর্গিক শান্ত প্রকৃতি। সকাল হলেই নতুন ঠান্ডা হাওয়ার ছোঁয়া আর কর্কশ কেকাধ্বনি যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল আলস-লালস পসরা সাজিয়ে শীতের আগমনবার্তা । আমার ছোটবেলায় বাবা মায়ের সাথে রাজস্থান ঘোরা কিন্তু এই বয়সে স্বামী-পুত্রের সাথে ছোট্ট এই গ্রামের মাঝে দিন কয়েক ঘুরে এসে ...কত পাখির কলরব শুনে, কত বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মনে পড়ে গেল..আমি বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন করলাম !

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু!!!!

Sunday, October 18, 2009

আমার দীপাণ্বিতা


আকাশ-প্রদীপ জ্বলছিল কার্ত্তিকের কলকাতার কালো আকাশে। ভূত-চতুর্দশির রাতে চোদ্দ-প্রদীপ জ্বালিনি সেবার।
বিয়ের আগে আমার দীপাবলী ছিল এক রকমের ।
দীপাণ্বিতার পূজো, অলক্ষী বিদায় করে ধনতেরসের লক্ষীবরণ, কত জাঁকজমক করে মায়ের ভোগরান্না, কলাপাতার থালায় প্রসাদ বিতরণ, মজা করে ভাই বোনেদের সাথে ঘিয়ের সাদা সাদা লুচি, নতুনশীতের ফুলকপির ডালনা খাওয়া। তারপরে অন্ধকার ছাদে উঠে বাজি পোড়ানো, আর ছাদের প্যারাপেটে সার সার মোমবাতি দেওয়া। আমার দীপাবলী আমার ঘরের দীপাণ্বিতার আলোয় আলোকিত হয় প্রতিবারে।
বিয়ের পরে আমার দীপাবলী এক এক বার এক এক রকমের হয়েছে। কোনো বার কেটেছে শুধু বারান্দায় বসে আলো দেখে, বাজির মালা দেখে, বাজির আওয়াজ শুনে। কোনোও বারে শুধু ঘুরে বড় বড় প্যান্ডেলে কালীঠাকুর দর্শন করে খেয়ে দেয়ে হুল্লোড় করে।
এবছর মরুপ্রদেশের সীমান্ত ঘেঁষে আরাবল্লী ঘেরা ময়ূরের দেশে দেখে এলেম তারে, রেখে এলেম তারে। অনেক দূরে, মরুশহরের পাশে, ছোট্ট গাঁয়ের দেশে, যেথায় ক্লান্ত মরুজাহাজ চলেছে বালির পথের ধূলো উড়িয়ে, গজগামিনী ময়ূর চলে দুলে দুলে মরুসাহারার বাগান দিয়ে, পেখম ঝুলিয়ে, পুচ্ছ দুলিয়ে..
ঝিঁঝিঁর ডাকে, রাতের আকাশে দেওয়ালির আলোয় এ গ্রামের মানুষ আমাকে অনেক কিছু দেখিয়েছে এবার। আতসবাজির কলরব, আকাশের বুকে আলোর রোশনাই, কত রকমের, কত রঙয়ের বাজি! বড় কষ্ট হল হস্টেলের ছেলেদের জন্যে, যারা এবারে দেওয়ালীতে বাড়ি যেতে পারলোনা, যাদের মায়েরা কত রকম খাবার বানিয়ে, থালা সাজিয়ে বসেছিল ..

Monday, October 12, 2009

দীপালিকায় জ্বালাও আলো!


দীপান্বিতার দীপাবলী, আঁধার রাতে প্রদীপ জ্বালি,
অমানিশায় তোমায় পূজি, মনের মাঝে তোমায় খুঁজি,
তোমার রূপের কালোর আলোয়, মনের আশায় সকল ভালোয়
ত্রিনয়নের জ্যোতির ছটা, দূর করো সব অঘটন ঘটা
লোলজিহ্বায় গ্রাস করে নাও, কপট-কলুষ-কালিমালিপ্ত,
অপারকরুণা বর্ষিয়ে তুমি মুছিয়ে ধরা কে করো যে শান্ত

Thursday, October 1, 2009

সোনার তরীর পাঠকদের আমার শুভ বিজয়ার প্র্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই

শান্তিনিকেতনের প্রান্তিকের দুর্গাপূজার বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠে আমি এবং সুমন দাস বাঁশীতে

Saturday, September 26, 2009

আজ মহানবমী



নবমী নিশি যেন আর না পোহায়,
তোকে পাবার ইচ্ছা মাগো কভু না ফুরায়,
রাত পোহালেই জানি আবার হবে দশমীর ভোর,
আবার তোকে পাবো মোরা একটি বছর পর |
মহা মায়ের মহামায়া, সোনার আলোয় কত পাওয়া
চারটি দিনের কত চাওয়া, ঊমাশশীর উতল হওয়া
কাঁদিস নে মা, আবার তোরে আসবো নিয়ে বছর পরে

Friday, September 25, 2009

আজ মহাষ্টমী


অষ্টমীতিথি সাঁঝের বাতিতে,
আলোকিত হল তোমারি আলোতে,
আজ হলে তুমি আরো সুন্দরী, !
ঘামতেল মাখা মুখপানে চাই,
আলোর পথেতে যেন পা বাড়াই,
তুই যেন মাগো আমাদের সাথে,
থাকিস পাশেতে প্রতি দিনেরাতে,
এইটুকু চাওয়া আর কিছু পাওয়া,
অষ্টমী পুজো শেষের বেলায়,
ভালো আরো বাসি পূজোর হাওয়া ।

আজ মহাসপ্তমী

সূর্যস্নাত সপ্তমী তিথি, নবপত্রিকায় তোমার আরতি,
ধন-ধান্যে বিপুলা প্রকৃতি, সবুজ ধরার পুন জাগৃতি,
নন্দিত তব চরণ পরশে, শস্যশ্যামলা সারাটি বরষে,
পূজি মাগো তোরে মনেরি হরষে, শুক্লা সপ্তমী তিথিতে
|

Thursday, September 24, 2009

আজ মহাষষ্ঠী


মহা ষষ্ঠীর বোধন লগনে, ঢাকের বাদ্যি শুনি ক্ষণে ক্ষণে,
উদ্ভাসিত মৃন্ময়ী রূপ সোনার প্রতিমা বরণে,
চিন্ময়ী মাগো আনন্দরূপীণী, স্থল-জল শোনে বোধনের ধ্বনি,
আকাশ-বাতাস মুখরিত আজি বন্দিত তব শুভ আগমনী |

Monday, September 21, 2009

আবার নতুন করে পাবো তোকে...


মাগো এসে আদর করে, বল্‌ না আবার নতুন করে,
সোনার হাসি ঝরবে মুখে, আলোর বাঁশি বাজবে সুখে,
সুহৃদ- মিতে থাকবে পাশে, যেন আবার শরত্‌ আসে ।
পূজোর ডালি সাজিয়ে নিয়ে, ফুলের রেণু মেখে গায়ে,
সুগন্ধী ফুল-চন্দন-আবীর ঢালি মোরা তোর দুপায়ে।
তর সয়না আর যে আমার, ঢাকে কাঠি পড়বে আবার,
আনবো তোকে শাঁখ বাজিয়ে, বোধন হবে উলু দিয়ে,
তুই যে মোদের সদাই সহায়, পাঁচ দিনের এই মজার আশায়,
ঘুচিয়ে দে মা আঁধার-কালো, সারা বছর দেখব আলো,
হিংসা-দ্বন্দ দে ঘুচিয়ে, মিথ্যা-কালি দে মুছিয়ে,
আকুল মোরা ব্যাকুল সবাই, (যেন) রাত পোহালেই তোর দেখা পাই ।

Tuesday, September 8, 2009

একালের স্বনামধন্য কবি জয় গোস্বামীর হাতে "মোর ভাবনারে" প্রকাশিত হল মহালয়ার পুন্য লগ্নে




জীর্ণ পাতাঝরার বেলায়, তোমাদের এই হাসিখেলায়, হঠাত্‌ মনে হল একটি কবিতার ব‌ই লেখাই যায়। অনেক কবিতা জমে ছিল। বন্ধু, হিতাকাঙ্খীদের প্রশ্রয়ে, আর সর্বোপরি আমার বাবা শ্রী নরেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্‌সাহে আজ আমার এই ব‌ই প্রকাশিত হল।
বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের যাঁরা আমার পাশে এসেছেন, ভালবেসেছেন, আমার লেখার কদর করেছেন। কৃতজ্ঞতা জানাই সেই সকল শুভানুধ্যায়ীদের, যাদের উতসাহে আমি আবেগ তাড়িত হয়ে, মোর ভাবনাগুলিকে একসূতোয় গাঁথতে সক্ষম হলাম।
বহুদিন ধরেই কাগজে কলমে বাংলা লিখি কিন্তু কম্পিউটারে সহজ, সাবলীলভাবে বাংলা লেখার প্রযুক্তির জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে হাতড়ে মরেছি। খোঁজ পেয়েছি softwareএর, কিন্তু সেগুলি কোনোটাই সেই অর্থে খুব user-friendly নয়। অবশেষে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খোঁজ পেলাম দীপায়ন সরকারের। তাঁর ইউনিকোড-ভিত্তিক বাংলা লেখার softwareএ অতি সহজে বাংলা লিখতে শুরু করলাম এবং আমার বাংলায় ব্লগ লেখার সূচনা হোল। আমি দীপায়নের সহজ প্রযুক্তির সাহায্যে এই ব‌ইটি সম্পূর্ণ নিজে টাইপ করেছি আর সব টেকনিক্যাল দিকগুলি দেখেছেন আমার স্বামী ডঃ পৃথ্বীশ মুখার্জি। আমার পুত্র শুভায়ন আমার ব‌ইটি অলংকৃত করতে সাহায্য করেছে। সুন্দর প্রচ্ছদের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের পরম সুহৃদ আর্ট কলেজের কৃতী ছাত্র শুভেন্দু দাস কে।
এদের সহযোগিতায় আমার কাব্যমালিকা "মোর ভাবনারে" আজ সফল রূপে রূপায়িত করতে পেরে আমি সত্যি আনন্দিত ।


To purchase this book please use the following form to send me an email

Price is Rs 60 plus postage [ Rs 15 by DTDC within Calcutta ]

Sunday, September 6, 2009

"MAHUL"abrittir Band....an experience!!


"মহুল" নাচল বলে, মাদল বাজা,
মহুয়া ফুটল বনে, মঞ্চ সাজা,
"মহুল" গাইছে সুরে সেন্স্-ননসেন্স্‌,
ছন্দে ও তালে তালে কথায় এসেন্স।
"আবোল-তাবোলে" বকে,
"হ-য-ব-র-ল"'র ঝোঁকে,
মাতাল "মহুলের" শাঁওলি-পলাশ
কি-বোর্ড-গিটারে সুরে,
অক্টোপ্যাডে তাল ধরে,
আরো তিন শিল্পীর পূর্ণ প্রয়াস।
হুঁকো-মুখো-হ্যাংলায়, যে আছিস বাংলায়,
শব্দ-কল্প-দ্রুমে বাজা তোরা ব্যান্ড |
"মহুল' বলছে কথা, সেরে যাবে মাথা ব্যথা,
গোঁফচুরি ভুলে গিয়ে দাঁড়ে বসে যা |
"মহুলের" কথা-গান, ছড়া বিগলিত প্রাণ,
দাঁড়ে-দাঁড়ে-দ্রুম্‌ শুনে জুড়ো তোর কান |

Saturday, September 5, 2009

কলকাতা


ওগো কলকাতা মহনগরী ! সিটি we N joy!

আছে আবেগের স্মৃতি বিজড়িত, “সিটি অফ জয় ” নামে বিখ্যাত ,

বেগের জোয়ারে মানুষের স্রোতে মিছিল নগরী নামে প্রচলিত,

তোমার আমার সবার শহর সিটি we N joy !

কল্লোলিনীর রূপে কেন ভুলি, বারবার সেথা মন দিয়ে ফেলি,

কেন সে বোঝে না ভুলের বশেতে, সে আছে যে জুড়ে আমার মনেতে,

তোমার শহর, আমার নগর, সিটি we N joy !

শৈশবে শীতে আলিপুর জু তে ,কৈশোরে জাদুঘরে ,

কলেজ পাড়ায়, কফি হাউসে ,বানভাসি মোরা জোয়ারে |

ভিক্টোরিয়ার পরী পাখা মেলে ,চড়ি ট্রামে বাসে পাতাল রেলে ,

আমার শহর মেট্রো নগরী সিটি we N joy !

প্ল্যনেটেরিয়াম মন ছুঁয়ে যায় ,হর্টিকালচার হাতছানি দেয়,

গঙ্গাবক্ষে রিভার ক্রুজে, নৌকা, সাঁতারে, স্টীমারে |

আহা সুন্দরী ! বড় রূপসিনী সিটি we N joy!

মেলার শহরে গান মেলা শুনি, ব‌ই মেলা হতে ব‌ই কিনে আনি,

সিনেমা নাটকে ভরপুর তুমি মুখরিত মেলা নগরী,

কল কল্লোলিনী দেয় হাতছানি সিটি we N joy!

হুগলী ব্রীজের মমতায় মাখা এক্সপ্রেস ওয়ে ধরি ,

যেদিকে দুচোখ চলে যায় মোর স্টিয়ারিং হাতে করি,

জনস্রোতের ভীড় উপছনো রাস্তায় ট্রাম গাড়ি ,

কোলাহল আর আড্ডার মাঝে আছে আমাদের ই বাড়ি,

তার‌ই মাঝে তুমি বাড়িয়েছো হাত, দিয়েছো যে বরাভয় ,

তোমার আমার সকলের রাণী সিটি we N joy!

মশা মাছি আছে আছে কত রোগ, তোমার এখানে কত দুর্ভোগ,

তবু কেন ছুটে আসি বারবার ,এ শহর প্রিয় তুমি যে আমার,

তোমার আমার ভীড়ের নগরী, সিটি we N joy !

গ্রীষ্মে তোমার প্যাচপ্যাচে ঘামে, লোডশেডিং আম লিচু কালোজামে,

বর্ষায় আছে কত জল জমা দেখি আমি বসে তাই,

ওগো সুন্দরী ভেনিস নগরী সিটি we N joy!

শরতে শিশিরে শিউলির ঘ্রাণে, দুর্গামায়ের আগমনী গানে,

মেতে উঠি মোরা ঢাকের বাদ্যে, আলোর বেণু বাজাই।

রূপসিনী তুমি ভুলিয়েছো মোরে সিটি we N joy !

টানা রিক্সায়, অটো রিক্সায়, বাইপাসে গাড়ি স্পিড না নামায়,

রেসকোর্স রেডরোডের মোহেতে, পেরেছি যে ভাল তোমায় বাসতে,

প্রেয়সী তোমার যাদুতে ভুলেছি, সিটি we N joy!

দূষণ ভূষণ হয়েছে তোমারি, কালো ছাপ সারা শরীরে,

বলিরেখা পড়ে বয়সের ভারে, ভুলে গেছ তুমি আমারে,

ওগো সুন্দরী ! চির আদৃতা, ধর্ণা- মিছিলে হয়ো মুখরিতা,

তবু তুমি জানি আমাদের রাণী সিটি we N joy!

Thursday, August 27, 2009

আমার তুমি


আমি বৃষ্টিভেজা বিকেল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম জেনো,
তুমি শিশির ভেজা পায়ে এসে আমার শব্দ শোনো,
আমি আগমনীর সুর তুলেছি শরত্‌ আলোর প্রাতে,
তুমি সেই সুরে যে সুর মেলালে আমার সাথে সাথে।
আমি অস্তরাগের রাগ-রাগিনী তোমার কান্না হাসি,
তুমিই আমার ইমন-বেহাগ তোমার কাছে আসি,
আমি তোমার দুখে দুখী, সুখের নতুন পাখী,
তুমিই আমার সুখের দোসর দুখ ভোলাতে ডাকি।
আমি অবাক হয়ে ভাবছি বসে আসছো তুমি রাণী,
তুমি সাজো নিজে, সাজাও আমায় ওগো আগমনী !
আমি তোমার আধফোটা ফুল, তোমার জন্য ফুটি,

তুমি আমায় নাও যে কোলে, তোমার পায়ে লুটি ।
আমি তোমার চঞ্চল গান, উচ্ছল প্রাণ-বীণা,
তুমি আমার সুরের ছন্দে গানের উপাসনা ।

Wednesday, August 26, 2009

পূজো আসছে


পূজো পূজো গন্ধ নিয়ে শিউলি ভেজা শরত্‌রাণী,
নীল আকাশে মেঘের ভেলায় ভাসছে সুরে আগমনী
কুমোরপাড়ায় ঠাকুর গড়া, সাজো সাজো রব সারা পাড়া ,
পাড়ার পূজো, পূজো বাড়ীর, চাঁদা তোলা, যোগাড় শাড়ির,
ও পাড়ার ঐ অমুক বাড়ির, পূজো এবার তাড়াতাড়ি
মন বসে না ধারাপাতে, ইতিহাস আর ভূগোলেতে,
লাল জরিপাড় হলদে শাড়ি, ব্যোমকাই বা বালুচরী,
হাল ফ্যাশনের রকমারী, কুর্তা, কামিজ আর কেপরি,
পূজোর সেল চলছে অনেক, কেনাকাটির ঝামেলা শতেক,
ভীড় ভাট্টায় পকেট কাটা, ছিঁচকে চোরের মজা লোটা,
হৈ চৈ পড়ে গৃহিনী মহলে, পূজোবার্ষিকী কোনটা কি বলে,
চটি জুতোর কত বাহার ! রেশমি-রঙীন কি মজাদার !
কেউ বা কাটায় পূজোর ছুটি, আয়েষে, আরামে বেড়িয়ে উটি,
হয়তো আবু কিম্বা পুরী, নাকি প্যান্ডেল হপিং আর হুড়োহুড়ি,

খোয়াই হাটের বিকিকিনি, কাঁথার কাজের পসরা আনি,
ছোট্ট ছেলে আদুড় গায়ে, মায়ের পাশে ব্যস্ত পায়ে,
ঢাকের আওয়াজ শুনতে পেল, কাশের ঝালর বুলিয়ে গায়ে, রাঙামাটির পথে গেল!

Friday, August 21, 2009

বাড়ি বদল


আজ বড় কষ্ট হল । বুকের মধ্যে কেন জানি তোলপাড় হতে থাকল । গলার কাছে কিছু জমা কথা দলা পাকাতে লাগল ।কি জানি আজ কেন যেন চোখের কোণে জল এসে গেল । চোখের জল নিয়ে বিয়ের কনে হয়ে এসেছিলাম এই বাড়ি, আজ এই বাড়ির সাথে আমার কেন যে হল আড়ি! পুরোণো বাড়ির প্রতিটি ইঁট-কাঠ, শান বাঁধানো রোয়াক, গন্ধরাজ,করবী,কামিনী ফুলের মায়া, টুকটুকে লাল মেঝে, আমার ঘরের পাশে একফালি ছাদ, আমার তুলসীতলা, বটের বনসাইয়ের কোলে শিবলিঙ্গ, দক্ষিণের বারান্দা ....সবকিছুর জন্যে বড় কষ্ট হল আজ।
বাড়ির অনেক বয়স হল যেমন অনেক সুবিধে ছিল, অনেক অসুবিধে ও ছিল। আমাদের ছোট্ট গ্যারাজের ছোট্ট গাড়িটাও আর রাখা গেল না.. নিয়ম হয়েছে ..আমি মাঝখান থেকে বড় কষ্টে র‌ইলাম। লাল মেঝের চওড়া চওড়া দালান ,করিডোর, পেল্লায় বৈঠকখানা, লম্বা সিঁড়ি ...কিছুই রাখা যাবে না..কাজের বৌ মুছতে চায়না, বেশি পয়সা পেলেও না। তারাও সুখী আজকাল ।
অল্প কষ্ট করে বেশি রোজগারের অনেক পথ হয়েছে যে । তাই আমার বড় কষ্ট হত।
বিয়ের আগে দূর থেকে বাড়িটা দেখেছিলাম..বিয়ের বেনারসী কিনতে গিয়ে। বিয়ের পরদিন সকালে এসে পা দিয়েই মনে হয়েছিল "আমাকে এই বাড়ির যোগ্য বৌ হতে হবে " বাবা ও তাই বলেছিলেন । একতলা থেকে দুধে-আলতা পায়ে তিনতলা অবধি গুরুজনদের প্রণাম করতে করতে কোমর ব্যথা হয়ে গেছিল। ফুলশয্যার রাতে খড়খড়ির দরজায় আড়ি পেতেছিল সব জায়েরা, আজও লজ্জায় মুখ ফুটে জিগেস করতে পারিনি। ফিস্‌ফিস্‌ করে সেই রাতে ওকে বলেছিলাম, খড়খড়িতে চাদর জড়াতে ...অনেক ফাঁক থাকে যে...সকলে যে আমাদের কথবার্তা শুনতে পাবে ।
বাড়ি পুরোণো হতে লাগল। যে কোনো দিকে তাকালেই মনে হয় সারানো দরকার .. ওদিকে ছাদ ফেটে জল পড়া তো এদিকে কার্নিশ ফেটে যাওয়া । আমার তিনতলার ঘর প্রচন্ড গরম .. সব মিলিয়ে কিসের যেন তাড়নায় চলে এলাম বাড়িকে ছেড়ে
ফ্ল্যাট বাড়ি, ভালো আবার খারাপ ও
কত পাওয়া, না পাওয়ার স্মৃতি,
কত শিখে নেওয়া রীতি ।
কত বেগ-আবেগের টানাপোড়েন,
কত হাসি-কান্নার লেনদেন ।
কত আলো-আঁধারের খেলা,
কত আনন্দ-উতসবের মেলা ।
কিছু দেনা-পাওনার হিসেব নিয়ে চললাম আমার নতুন বাড়ি,
পুরোণো ইঁট পুরোণো সেই ঘরের সাথে, আমার হল আড়ি ।
দুপুর বেলা পিওন এসে চিঠি দেবেনা আর,
তরতরিয়ে সিঁড়ি ভাঙার নেই কোনো দরকার ।
বাজবে নাকো কলিংবেল আমার দরজায়,
ক্লান্ত দুপুর বসে থাকবে আমার অপেক্ষায়।
আমার বাড়ি, আমার গরম কাল,
দখিনখোলা লেকের হাওয়া, সন্ধ্যেবেলায় হারিয়ে যাওয়া
শীতের দুপুর, রোদের মেলা, দেখবো নাকো আর,
আমি চলে এলাম বলে কি ই বা হল হাল !!

Tuesday, August 11, 2009

সখী, স্বাধীনতা কারে কয়?



আমরা মনুষ্যজন্ম লইয়া পৃথিবীতে আসিয়াছি ভুলেও ভাবিবেন না যে আমরা মানুষ হইয়াছি আমরা নব্য সংস্কৃতির ধারা বহন করিতেছি মাত্র রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুণধরা এই আধুনিক নগরসভ্যতার যাঁতাকলে পিষ্ট হইয়া যন্ত্রমানবের ন্যায় কর্মবীর হইয়া উঠিয়াছি আমাদের সুদৃশ্য বাহ্যিক রূপোলী মোড়ক দেখিলে ভ্রম হয় , অভ্যন্তরের রক্তমাংসের মানুষটির এহেন অন্তঃসার শূন্য রূপ ? আমরা পাশ্চাত্যের নিকট প্যাকেজিং শিখিয়াছি, কিন্তু প্যাকেটের অন্দরমহলে "quality product" পুরিতে অক্ষম, সে মানুষই হোউক আর জিনিষই হোউক
তৃতীয়বিশ্বের চতুর্থশ্রেণীর নাগরিকগণের নিকট ইহা অপেক্ষা অধিক আশা করাই বৃথা স্বাধীনতার পরবর্তী কালে দেশনেতা সহ আপামর-জনসাধারণ বহুদিনের আকঙ্খিত স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়া উহার স্রোতে গা ভাসাইয়া দিল ফলস্বরূপ অল্পদিনের মধ্যেই দেশের অভ্যন্তরে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হইল দেশবাসী এতদিন ধরিয়া সম্মিলিত ভাবে বিদেশীশক্তির আধিপত্য মানিয়া লইতে পারিতেছিলনা |
এক্ষণে তাহারা ক্ষমতাশীল হইয়া একসূত্রের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াতো দূরের কথা, স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ এবং নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করিবার জন্য যাহা করণীয় তাহা লইয়াই ব্যস্ত হইয়া পড়িল
ফলস্বরূপ মতভেদের বিভিন্নতা এবং দলের বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হল ভিন্ন ভিন্ন দলের অগণিত মানুষ গণের বিচিত্র বুদ্ধি, বিভিন্ন মতামত প্রধান্য পাইতে লাগিল এহেন অরাজক পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তি 'বাবু' ব্র্যান্ডের তকমা আঁটিয়া বুক ফুলাইয়া সমাজের আনাচে-কানাচে ঘুরিতে লাগিল, কেবলই দলের 'ব্রান্ডেড বাবুদের' নিকট হইতে স্বার্থসিদ্ধির আশায় স্বার্থান্বেষী ব্র্যান্ডেড বাবুরা ধীরে ধীরে দেশের আপামর -জনসাধারণকে 'রাজনীতি' নামক এক ছদ্ম ও অলীক ন্যায়শাস্ত্রের মুখোশ পরাইয়া দিল এবং ক্ষমতার অপব্যাবহার করিয়া অশিক্ষিত,মূর্খ অসহায় মানুষদের যেরূপ বুঝাইল তারা সেরূপই বুঝিল শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ এক সুষুম্না-স্নায়ু অবশ করানো এক নঞর্থক মানসিকতায় পুষ্ট হইল
এদিকে ব্যাপক বিশ্বায়নের ঢেউ আছড়াইয়া পড়িল ভারতবর্ষের তটভূমিতে মনুষ্যগণ পাশ্চাত্যের সভ্যতারূপ দুগ্ধের নবনীটুকু গ্রহণ করিতে শিখিল না ,কেবল জলীয় অংশটুকু গ্রহণ করিয়া ভাবিল "কি না হনু"! প্রাচ্যের জলের সহিত পাশ্চাত্যের দুগ্ধের জলীয় অংশটুকুর মিশ্রণে আরো নিকৃষ্ট সভ্যতার তরল-গরল উদ্-গিরণ হইতে লাগিল সমাজের বুকে | প্রতিনিয়তঃ আমরা সেই গরলের আস্বাদ পাইতেছি
গ্রামের মানুষ এ যুগেও অশিক্ষা ও কুশিক্ষার বাতাবরণে কালাতিবাহিত করিতেছে অনেক নিকটবর্তী গ্রামে মানুষ একালেও চিকিত্সার অভাবে প্রাণ হারাইতেছে এমনকি শহরেও বিদ্যালয়,মহাবিদ্যালয় , বিশ্ব-বিদ্যালয় , হাসপাতাল, পথ-ঘাট, সর্ব ক্ষেত্রে সুচিন্তিত পরিকাঠামো এবং দেখভালের অভাবে ভাঙিয়া পড়িতেছে
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা, নেতাগণের স্বেচ্ছাচারিতা, 'বীরভোগ্যা' বসুন্ধরার সম্পদের যথেচ্ছাচার, সরকারী অর্থের অপব্যবহার ,মানুষের নেতিবাচক মানসিকতা , পূর্বতন নেতাগণের অযোগ্য উত্তরসুরি ....এই ষড়রিপু দেশের মানুষকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বাঁধিয়া , দেশের অর্থনৈতিক,সামাজিক, নৈতিক সর্বক্ষেত্রে ঘুণ ধরাইয়া দিল স্বাধীনমানুষ মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়া সভ্য হইল রাজনৈতিক নেতাগণ কেহ চাকরি, কেহ বসতবাড়ি , কেহ পদমর্যাদা ....এইসব মহত্স্বার্থে গণতন্ত্ররক্ষার বৃহত্-কর্তব্যে অবহেলা করিল আমরা শিখিলাম বহুতল ফ্ল্যাট-কালচার, লেট্-নাইট পার্টি-কালচার , ডিস্কোথেক কালচার কম্পিউটারাইজেশন হইল | শুরু হইল কেব্-ল্-টিভি , ইন্টারনেট , মোবাইলফোন , ইত্যাদি অত্যাধুনিক পরিষেবা | আরো সভ্য হইলাম শিশু হারাইল শৈশব এবং যৌবনের পূর্বেই যৌবনের দায় লইতে পারিয়া যার-পর-নাই কৃতার্থ হইল প্রৌঢ়েরা পাত্তা না পাইয়া কৃতাঞ্জলিপুটে শিঙ ভাঙিয়া বাছুরের দলে প্রবেশ করিল | বৃদ্ধেরা উত্যক্ত হইয়া ব্যাপক বিশ্বায়নের ঊর্মিমালায় খাবি খাইতে খাইতে বাণপ্রস্থ লইয়া বৃদ্ধাশ্রমে বাস করিতে লাগিল সমাজের অলিগলি দুষ্কৃতি দুরাত্মাদিগের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হইল শিক্ষক অধ্যাপক এবং চিকিত্সক হারাইল মূল্যবোধ নর-নারীগণ লাজ-লজ্জা জলাঞ্জলি দিয়া একাধিক অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হইল
এরূপে শুরু হইল সমাজের সর্বস্তরে অবক্ষয়স্বাধীনতার আনন্দে সমাজে হইল বহু নায়ক... পুরুষ নায়ক, স্ত্রী নায়ক, শিশু নায়ক |
মানুষ গোষ্ঠীভুক্ত হইয়া পড়িল এবং নিজেদের মধ্যে কলহ বাধাইয়া ফেলিল দেশব্যাপী 'সভ্য' হইবার হিড়িক পড়িয়া গেল কিশোর উপেক্ষা করিল কৈশোরকে আর অচিরেই পদার্পণ করিল যৌবনে | সহসাগত যৌবনের আস্বাদ গ্রহণ করিয়া নবীন প্রজন্ম আগলহীন নব্য-সংস্কৃতির বোরখা পরিয়া লইল অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে একালেও প্রাথমিক বিদ্যালয় , বিদ্যুত এ সব বিরল একান্নবর্তীপরিবার বিভাজিত হইয়া এককোষী পরিবারে পরিণত হইল |
স্বাধীনতার প্রাক্কালে যখন দেশশুদ্ধ মানুষ যখন প্রাণ ঢালিয়া স্বাধীনতা দিবস উদ্-যাপনে ব্রতী হইয়াছে তখন মনে হয় কিসের জন্য তাহাদের এত উত্সাহ? পাড়ায় পাড়ায় তরুণ-তরুণী স্বাধীনতা পালন করিতেছে, মাননীয় নেতাগণ বীরবিক্রমে কন্ঠনালী ফুলাইয়া গগনভেদী চিত্কার করিয়া বাতাস ভারী করিতেছেন, প্রচারমাধ্যমগুলি প্রতি পলে পলে স্বধীনতার সংগীত , প্রতি দন্ডে দন্ডে স্মৃতিচারণ , সকালে স্বাধিনতা সংগ্রামের উপর তথ্যচিত্র তো বিকালে ছায়াছবি, প্রদর্শন করিতেছে | কখনো বিরলকেশ ,বর্ষীয়ান নেতাকে বহুকষ্টে উপস্থিতপূর্বক তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা আমাদিগকে পরিবেশন করিতেছেন ,শহীদ-স্মৃতি ফলক শ্বেত-পুষ্পের অবগুন্ঠনে চলিয়া গিয়াছে, ব্রিগেডের মৃত্তিকা পুষ্পবৃষ্টিতে ছয়লাপ হইয়াছে,শহীদমিনারের পাদদেশে লক্ষ মানুষ ভীড় করিয়া নেতাগণের জ্বালামুখী বক্তৃতা শুনিতেছে, সারাদেশের আকাশে বাতাসে স্বাধীনতার পাঞ্চজন্যের বজ্রনিনাদ অনুরণিত হইতেছে তখন স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে , কেনই বা এই উত্সব? কি জন্য পাইয়াছিলাম স্বাধীনতা? আমরা কি স্বাধীনদেশের যোগ্য উত্তরসুরী?




Thursday, August 6, 2009

রাখী রাখিও না হাতে !!

বাঙলার মাটি, বাঙলার জল, বাঙলার বায়ু, বাঙলার ফল
রাখী বাঁধি হাতে, ছোরা নিয়ে সাথে, রাখি হাতে হাত, চলি দলে দল |
আকাশের বুকে কালো ধোঁয়া ছায়, বারুদের ঘ্রাণে বায়ু বিষময়
হাতে রাখি হাত, বাঁধি রাখী তায়, পাছে প্রাণ যায়, মনে ভয় হয় |
মানুষে মানুষে শুধু হানাহানি, হিংসা-কলহে বড় টানাটানি
বাঁধি রাখি আমি বন্ধুর এক হাতে বিষ দিই তার অন্য আরেক হাতে |
মিছরির কুচি পুরে নিয়ে মুখে, ছুরি খানা গুঁজি বন্ধুর বুকে
ভয় হয় যদি কেউ দেখে ফেলে , জরিময় রাখী বেঁধে দিই সুখে।
কত শত রাখী বাজারে এসেছে রাখি না কো তার খোঁজ
শুধু ভাবি মনে রাখী বাঁধবার কি এ প্রহসন রোজ?

Sunday, August 2, 2009

ভালো থেকো বন্ধু

বন্ধু হয়ে বন্ধু থেকো হাত বাড়িয়ে হাতটি ধরে,
যেমন করে লতায়-পাতায় মিলেমিশে আছে দূরে,
ঠিক এমনি করে থেকো পাশে,
যেমন করে নদীর জলে নৌকো ভেসে দূর থেকে দূর ঐ যে আসে,
ঠিক এমনি করে এসো কাছে, যেমন করে মৌমাছিরা ফুলের পাশে পাশে আছে|
এমনি করেই থাকো তুমি, যেমনটি ঠিক সূর্য ওঠে, চাঁদ হাসে আর তারা ফোটে।
যেমন খুশি এসো পাশে, ফুলের কাছে প্রজাপতি হয়ে এসে ভলোবেসে।
ভালো থেকো তুমি বৃষ্টি ফোঁটায়,
ভালো থেকো তুমি শিউলি ঝরায়,
আর ভালো থেকো তুমি আলোয়-আঁধারে,
ভালো থেকো কুয়াশা ঘেরা দূরের ঐ পাহাড়ে।
ভালো থেকো স্বপ্ন নিয়ে, ভালো থেকো সুরে ছন্দ নিয়ে,
ভালো থেকো আকাশের নীলে, ভালো থেকো সাগরের জলে।

Friday, July 31, 2009

Images from Pilani






কু ঝিক ঝিক রেলের গাড়ি


কু ঝিক ঝিক রেলের গাড়ি, চলল ছেড়ে আমার বাড়ি,
নিয়ে চলল সুরের কড়ি, কু ঝিক ঝিক রেলের গাড়ি।
কু ঝিক ঝিক রেলের গাড়ি, দূরের পথে দিল পাড়ি,
র‌ইল পড়ে আমার শহর স্কুলের পথ আর মায়ের আদর,
কু ঝিক ঝিক অনেক দূরে, পা বাড়িয়ে গানের সুরে,
চলল সাথে কান্না হাসি স্মৃতির পাতায় গানের বাঁশি,
তারার আলোয় চাঁদের হাটে, নয়নতারার গানের মাঠে,
সুরের স্রোতে ভেসে ভেসে, ছন্দে তালে হেসে হেসে,
কু ঝিক ঝিক বাজনা বাজাই, গান গেয়ে যাই, গান নিয়ে যাই,
র‌ইলো পড়ে ছেলেবেলা, শীতের রোদে ক্রিকেট খেলা,
গরম দুপুর সাঁতার কেটে, বিকেল হাওয়ায় লেকের মাঠে,
ছুটির ঘন্টা বাজতো যখন, লং ড্রাইভে যখন তখন,
বৃষ্টি আকাশ ফুলেল বাতাস, মাটির কোলে আমার প্রকাশ |
মায়ের পাশে পাশে থাকা, আজকে আমার মা যে একা,
একরাশ মন খরাপ নিয়ে, বৃষ্টি এল ইলশেগুঁড়ি,
অনেক দিন পরে আবার ফিরবো আমি আমার বাড়ি |
একমুঠো শিউলি নিয়ে শিশির ভেজা পায়,
বহুদিন ধরে আমি থাকবো অপেক্ষায়,
সারাদিন আর সারাবেলা, মনখারাপের দুপুর বেলা,
চাঁপার বনে দুষ্টুমি আর আবোলতাবোল কিছু খেলা |
মায়ের চোখে বাদল কালো, মা আমি আর সবাই ভালো,
মেঘের কোলে নভোনীলে, রোদের আলোয় বৃষ্টি ভুলে,
"সব পেয়েছির দেশে" এলাম মাকে আমি দূরে ফেলে |

Friday, July 10, 2009

সেরা বাঙালি আমাদেরই তারা, বাঙলায় তথা বিশ্বের সেরা ...


আমাদের এক বিশেষ ভালো বন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছিলাম নিমন্ত্রণ,
সায়েন্সসিটির প্রধান প্রেক্ষাগৃহে, সেরা বাঙালির নির্বাচনের যখন এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!
হাজির হয়ে সপরিবারে, যোগ দিলাম ষ্টার আনন্দের মহা কর্মকান্ডে,
জগতের আনন্দ যজ্ঞে সেরা বাঙালির নির্বাচনে,আমাদের নিমন্ত্রণে,
প্রতিবার দেখি টিভির পর্দায়, এবার সপরিবারে, সশরীরে খাঁটি বাঙালিয়ানায়!!
দন্ডমুন্ডের কর্তা শ্রী অভীক সরকার এককথায় সর্বশুভ্র-শান্ত- সৌম্য বাঙালিয়ানার আইকন ...
তাঁর সাবলীল বাচন ভঙিমায়, সামান্য কথায়, কিছুক্ষণ !!
দেখে এলেম তাঁরে..আমার মনে এতক্ষণে "সেরা বাঙালির "সেরা পুরস্কারে, সেদিনের সন্ধ্যায়, আমি তাঁকে জানাই পরম শ্রদ্ধায় !ঠান্ডা ঠান্ডা ঘর, সাজানো মঞ্চ, সুমন-স্বস্তিকার সঞ্চালনায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে, সহসা এ.আর রহমানের বিখ্যাত সুরের অণুরণন ঝঙ্কৃত হল ...প্রেক্ষাগৃহ "বাঙলা মা তুঝে সালাম !! বন্দে বিশ্ব বাঙালির তরে বন্দেমাতরম্‌ !!!বর্ণালির বিচ্ছুরণ! তেরঙার আলোক কিরণ ...এ কি কম্পন ! এ কি শিহরণ !
বাঙালিয়ানার গন্ধ নিয়ে আপ্লুত আমরা মানুষজন!!

এক নজরে সেরার আসনে অলঙ্কৃত বাঙালিরা হলেন :
চলচিত্রের রাহুল বোস, সংগীতের শান্তনু মৈত্র, ক্রিকটের ঝুলন গোস্বামি, সাহিত্যের কেতকী কুশারী ডাইসন, বাণিজ্যে সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়,
অভিনয়ে পাওলি দাম, শিল্পকলায় আবির কর্মকার, সেরার সেরা মুকুট মাথায় রণেন সেন এবং লাইফ টাইম পুরষ্কারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ।

সাথে উপরি পাওনা : ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের নৃত্যশৈলি,অভিজিত্‌ আর শ্রেয়া ঘোষালের অনবদ্য সুর-ছন্দ-তাল-লয়ের মেলবন্ধনে ,বাঙলা এবং হিন্দিগানের ভান্ডার থেকে উন্মোচিত হল একে একে....

এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় ...বাঙালি হয়ে বাঙালির দরবারে শুধু হাজির হয়েই ধন্য আমি !



Wednesday, July 1, 2009

চ্যানেল ৮ (Sony ৮) এ ব্রেকফাস্ট শো FM AT 8 আমি

এই কবিতা টি সাথে সাথে রচনা করে ফোনে আমি বেস্ট কলার হয়ে Channel 8 এ আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম |
আলো আর অন্ধকার
আলো আছে, আর আছে অন্ধকার,
আর আছে সুখ, সাথে দুঃখ নেই কার?
হাসি আছে, সাথে কান্না আছে তার,
নারী আছে, সাথে পুরুষ আছে তার ;
আছে খোলা আলোর জানালা,
আমি আছি অন্ধকারে একেলা,
দুঃখ নিয়ে বিলাস করি আমি,
সুখ যে বড় ক্ষণস্থায়ী তুমি,
তাই আলোর আশায় অন্ধকারে থাকি।
অন্ধকার কে একলা বসে ডাকি।

Saturday, May 23, 2009

নয়নতারার গান


TARA MUZIK এর স্টুডিও তে নির্মিত এবং TARA MUZIK দ্বারা প্রচারিত

Wednesday, April 15, 2009

১লা বোশেখ : মল্লিকা, শুনতে পাচ্ছো ?

মল্লিকা, শুনতে পাচ্ছো ? আজ নতুন বোশেখের প্রভাতফেরী....তুমি একটা রামধনু রঙা নতুন শাড়িতে, আমি জ্যোত্স্না-রূপোলী জরি পাড়ে,  মৈত্রেয়ী অস্তরাগের লাল ঢাকাইতে। বসুন্ধরা কাঁচপোকা রং সালোয়ারে, নাজিয়া জলরঙা উড়নি গায়ে আর রেশমী একটা পাটভাঙা ময়ূরকণ্ঠী মাহেশ্বরীতে।  আর সবার আগে চলেছেন আমাদের সকলের ছন্দাদি একটা জলপাই রঙা জামদানিতে  | 
আমরা চলেছি ১৪১৬ কে স্বাগত জানাতে...সে কি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণের প্রয়াস  !!
জানো মাস কয়েক আগের কথা । আমার ছাদের আলসেতে হঠাত একটা পারাবত এসে মুখে করে একটা চিরকুট দিয়ে গেল... জানতে চাইল আমার নাম, ধাম... কি যেন মনে হোল লিখে দিলাম |  পৌঁছে গেল সে দরবারে । আবার দৌড়ে এসে দিয়ে গেল নিমন্ত্রণের ডাক । আমি হাজির হলাম ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে। পৌঁছে গিয়ে দেখি চেনা চেনা মুখ, রঙচঙে পোশাক ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ঘরে সাজানো মঞ্চ...অনেক আলোর মাঝে  ঠিক প্রদোষে, সে এক সব পেয়েছির দেশে।  আমায় কিন্তু চিনলোনা কেউ ..জানো? আমি দূর থেকে শুধু দেখলাম আর মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলাম।  কত কথা হল, হল কত গান....
ঠিক যেমন সুরের ভেলায় ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যাই সকালের আমন্ত্রণে,
ছন্দের দোলায় শুনতে গান ডাউন মেমারি লেনে 
 আবার মনদরিয়ায় উঠবে তুফান জলসাঘরের টানে
 গীতবিতানের বাতায়নে বসি মাটির গানে, হৃদয়ের টানে
 আবার নতুন করে পাবো বলে..
 নতুন বছরে পাবো তোমার নিমন্ত্রণ |
 ভালো থেকো বন্ধু, ভালো থেকো তারার সবাই।   

Saturday, April 11, 2009

আজ সকালের ভুলের মাশুল দিতে দিতে...

তুমি বন্ধু হয়েছ বলে, সেদিন তোমায় দেখেছিলাম বিকেলবেলায় |
তুমি ভোরেরবেলা হয়ে এসেছো আজ নলবনের পাশটিতে, কান দিতে আমার ভুলগুলোর লিস্টিতে |
তুমি আসবে বলে আজ আমার ধূমায়িত চায়ের পেয়ালা ঠাণ্ডা হয়ে গেল,
তোমায় দেখবো বলে ওদিকে আমার দুধ উথলে গেল,
তুমি আসবে বলে আমি পূজোর বাসি ফুল ফেলতে ভুলে গেলাম,
তোমায় দেখবো বলে অপরাজিতা ফুল তুলতে গিয়ে আমি ভুল করে জবার কুঁড়ি তুলে ফেললাম,
তোমার জন্য চায়ের জল ফুটে ফুটে মরে গেল,
টোষ্টারে পাঁউরুটি জ্বলে পুড়ে একেবারে খাক !
তোমার জন্য ফল কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছি..
মন খারাপ করতে ভুলে যাই আজকাল |
খোলা জানলার ধারে বসেছিলাম আজ, আজকের খবরের কাগজের একটা পাতা উড়ে চলে গেল আমার চোখের সামনে দিয়ে,
সে ও আমার ভুলের জন্যে, কারণ আমার চোখ যে ছিল টিভির পর্দায়, তোমার চোখের দিকে..
কবি বলেছেন "যাহা পাই তাহা চাই না, আর যাহা চাই তাহা ভুল করে পাই"
ভুল করে অনেক কিছু পেলাম !!!!

....................................................................................................................


"তারা মিউজিক" চ্যানেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ breakfast show" আজ সকালের আমন্ত্রণে" র আমি একজন frequent caller১০ই এপ্রিল ঐ show এর anchor মৈত্রেয়ী "ভুল" টপিক সম্বন্ধে শ্রোতাদের কিছু বলার অনুরোধ করেছিল...তাই এই কবিতাটি আমি সাথে সাথে লিখি আর ফোনে এ পাঠ করি...

Sunday, March 1, 2009

"তারা"-- তাহাদের ক্লাবের নাম



আবার শুভদিনে তারার নিমন্ত্রণে যেতে চাই বারে বারে
রবির কিরণে ছন্দে ছন্দে দোলা দিয়ে আপনারে |
মল্লিকার সুগন্ধে আর মৈত্রেয়ীর মিষ্টতায়
ছন্দের তালে তালে আর ছন্দাদির আতিথেয়তায় |
তারায় তারায় জাগাও তোমার আলোক ভরা বাণী
তুমি সুন্দর আর সার্থক হও শুধু এইটুকু আমি জানি |
বিশ্বাস রেখো মানবতায় আর সহমর্মিতায়
তারার আলোয় আলোকিত করো জগতের সব কলুষতায় |
যা কিছু কপট কালিমালিপ্ত মুছিয়ে ধরাকে করো যে শান্ত
গানের বানীকে পাথেয় করে এগিয়ে চলো শির উন্নত করে ,
আমাদের পাশে রেখো যে তোমার এইটুকু আবদার
আকাশে বাতাসে ছোটো-বড় তারার হোক জয় জয়াকার |