Saturday, May 29, 2010

ঋণি

আবার তোকে চাইছি কিশোরবেলা,
নদীর ধারে ভাঙা পাড়ে সেই যে বকুলতলা
আমি তখন দশ-এগারো, শিউলিফুলের ভোর
আম-কাসুন্দী, লুকোচুরি, চোখে স্বপ্নের ঘোর
কাঠবেড়ালির পেয়ারা চুরি, ভাঙা কিছু কাঁচের চুড়ি
পেরিয়ে গেলি কিশোর সিঁড়ি, বসন্তে তোর দোলপিঁড়ি

আমি তখন ঊনিশ-কুড়ি, পুতুল বিয়ে ভোলা
কফিহাউস, অন্ত্যাক্ষরী আর, তর্কে তুফান তোলা
নিউমার্কেট, চৈত্রসেল, দু একটা টিউশানি
লাইব্রেরি, মেগাসিরিয়াল আর, “মহীনের ঘোড়া” শুনি
শীতের রোদে পিঠ তোর, উলকাঁটার উল্টোসোজা
সহজপাঠ শেষ হোলনা কো, শুরু রাস্তাখোঁজা

আবার তোক চাইছি কলেজবেলা
গানসিঁড়িটির ধার ঘেঁষে আয় আমার মেয়েবেলা
গানের ইস্কুল, বর্ষামঙ্গল ফিরিয়ে দেব তোকে,
মুঠো মুঠো শিউলি দেব,  কাঁচের চুড়ি পরিয়ে দেব
পয়লাবোশেখ, ফ্রকের ঝালর, জরির ফিতের ফাঁকে।

Wednesday, May 26, 2010

Saturday, May 15, 2010

"প্ল্যান-চ্যাট " (অণুগল্প)


রাতটা চব্বিশে বোশেখের আর সময়টা পোষ্টডিনার ।  সন্ধ্যেটা ছিল বৃষ্টিময়তায় মাখা, মনটা ছিল প্রাক-রবীন্দ্রজয়ন্তীর  আড্ডার মেজাজে । ঋক, ঋভু, ঋজু আর ঋতম এর হাতে তৈরী ব্যান্ডের বার্ষিক প্রোগ্রাম “ঋ এ রবি, রাতের তারা”..তারই জোর প্রস্তুতি | প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর, নতুন যৌবনের এই চারজন দূতের অনেক স্বপ্ন মনে আর স্বপ্ন নিয়েই এই চঞ্চলতা । গ্রুপচ্যাটে চারজনের প্রতিদিনের নেটালাপে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকল্পনার রূপায়ণের প্রয়াস চলে। সেদিন ছিল প্রোগ্রামের আগের রাত । তাই উত্তেজনার পারদ হৈ হৈ করে উঠেছিল আর দুকুল-প্লাবি চারটি মন-নদীর চ্যাট-বক্স যেন উপছে পড়ছিল কথায়, কথায় আর কথায় …
ঋক : তাহলে ঋজু শুরু করছে আবৃত্তি দিয়ে “তোমারে নমি এ সকল ভুবন মাঝে ….”
ঋভু : এরপরে ঋক তোর গান “তুমি কি কেবলি ছবি, শুধু পটে লিখা….”
ঋজু : নেকস্ট ঋক, তোর নিজের কথায় আর সাথে গীতাঞ্জলি থেকে পাঠ …
ঋতম : এবার আবার ঋভুর সোলো গান  “শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু হে প্রিয়…”
ঋক : এবার আমাদের কোরাস “আজি শুভ দিনে পিতার ভবনে অমৃত সদনে চল যাই “  তাই তো রে?
ঋভু : হ্যাঁ, ঠিক আছে |এবারে সঞ্চয়িতা থেকে বনবাণীর  উদ্‌বোধন কবিতার অংশ,  আমার আর ঋজুর দ্বৈত আবৃত্তি “ডেকেছ আজি, এসেছি সাজি হে মোর লীলাগুরু —”
ঋভু : মানে  “নৃত্যলোল চরণতলে মুক্তি পায় ধরা, ছন্দে মেতে যৌবনেতে রাঙিয়ে ওঠে জরা”  পুরোটা তো ?
ঋতম : এবার আবার  আমাদের চারজনের কোরাস “আলোকের এই ঝরণাধারায় ধুইয়ে দাও ”
ঋক : @ ঋতম, ঠিক আছে, মিউজিসিয়ানদের পেমেন্ট গুলো নিয়ে যাস খামে ভরে
ঋভু : @ ঋক,  মাইক ওলা কে আবার বলে দিস, সময় মত পৌঁছে যেতে
ঋজু : @ ঋতম,  তুই তাহলে ফুল-মালা-মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে হাজির হচ্ছিস কাল
ঋতম : তাহলে কাল বিকেল ৫টা, সবুজবীথি, চাষীর বাগান মাঠ

হঠাত্‌ পাবলিক চ্যাট রুমে আবির্ভাব এক অজ্ঞাতকুলশীল পঞ্চম অতিথির । ইথার তরঙ্গের বাতাস যেন ভারি হয়ে গেল নিমেষের মধ্যে । নিবে গেল ঘরের আলো, শুধু জ্বলতে লাগল ল্যাপটপের আলো…..
গেষ্ট : তোমাদের  কিসের এত তোড়জোড় চলছে?
ঋক : আমাদের আগামীকাল রবিঠাকুরের সার্ধশতবর্ষ জন্মজয়ন্তীর একটা প্রোগ্রামের ব্যাপারে কথা হচ্ছে।
গেষ্ট: তোমরা এই সাইবার এজের তরুণেরা এখনও রবীন্দ্র চর্চা কর বুঝি?
ঋভু : মানে? রবীন্দ্রনাথ আমাদের শয়নে, স্বপনে, জাগরণে…
গেষ্ট : তার মানে তোমরা এখনো পড়?”তাল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে”
ঋক : কেন ? আপত্তি কোথায়?
গেষ্ট : তোমরা সহজ পাঠ পড়েছ?
ঋতম : না পড়ে আজ রবীন্দ্রনাথ বলে চেঁচাচ্ছি বুঝি?
গেষ্ট : তোমরা  কেমন রবীন্দ্রনাথ পড় । আমাদের সময় আমরা পেয়েছি কালিদাসকে, আর পড়েছি বিদেশী সাহিত্য।
আচ্ছা তোমাদের কি মনে হয়না যে এই রবীন্দ্রনাথের জন্য কত শিল্পী আজ করে খাচ্ছে।
ঋতম : হ্যাঁ, ঠিক ই তো |
গেষ্ট : কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান, আবৃত্তি, নাটক এ নিয়ে তো দেশের সক্কলে কবিপ্রণাম জানাচ্ছে তা তোমরা কিছু নতুন জিনিষ ভাবছ না কেন?
গেষ্ট : পদার্থবিদেরা নিউটোনিয়ান মেকানিক্স বা যাকে তোমরা ক্লাসিকাল মেকানিক্স বল, তা থেকে এগিয়ে গিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে কোলাকুলি করছে, সেখানে তোমাদের মত শিল্পীরা সেই রবীন্দ্রজয়ন্তীতে পড়ে রয়েছ?
ঋক :  না, মানে ঠিক তা নয়  …
গেষ্ট :  ছড়িয়ে দাও রবীন্দ্র ভাবনা ইন্টারনেটে, শুনছিলাম জেমস ক্যামেরন বলে একজন “অবতার” নামে একটি ছবি করেছেন|
তা তোমরা  মাল্টিমিডিয়ায় পাল তুলে দাও না রবীন্দ্র স্মরণ-মননের ! “তাসের দেশ” পড়েছ নিশ্চয়ই , তা মাথায় আসেনা? তাসের দেশকে কেমন করে ত্রিমাত্রিক ভাবে বানানো যায় ? আজ দেড়শ বছর ধরে সেই গতানুগতিক রবীন্দ্রজয়ন্তী দেখে আসছি । তা তোমরা বাপু পরের বছরে এই তাসেরদেশ নৃত্যনাট্যটিকে যদি মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে মঞ্চস্থ করতে পার তাহলে বুঝি | যেখানে তাসের দেশের বিচিত্র তাসেরা মানুষের চারপাশে নেচে কুঁদে সব অনুশাসনের কথা বলবে, আর দর্শকরা ৩ডি চশমা পরে  দেখবে আর চেঁচিয়ে বলে উঠবে “এলেম নতুন দেশে …..” অথবা গেয়ে উঠবে “আমরা নূতন যৌবনেরই দূত”

ঋক : খাসা চিন্তা ভাবনা ! আপনার ক্রিয়েটিভিটির তারিফ না করে পারছিনা ।
গেষ্ট : রিসোর্স কে ভাঙিয়ে খাচ্ছ খাও  কিন্তু মনে রেখ, রিসোর্সের আর লিমিটেড বাট ক্রিয়েটিভিটি ইজ আনলিমিটেড !
ঋভু : এক্কেবারে ঠিক কথা বলেছেন । আপনার ইমেল আইডি টা দেবেন প্লিজ, আপনি আসুন না আমাদের অনুষ্ঠানে
গেষ্ট :  “তুমি মোর পাও নাই পাও নাই পরিচয় ”
ঋজু :  দিন না আপনার ব্লগের ঠিকানা
গেষ্ট :    ইমেল :  bhanudada@parolok.com
আর  ব্লগের ঠিকানা  : http://rabindranath.geetanjali.com


“তোমাদের   “ঋ এ রবি রাতের তারা”
উঠুক ফুটে  আকাশপারে
আমি আছি, ছিলাম সাথে
যুগযুগান্ত  বছর পরে”

হঠাত সকলের নেট কানেক্সন চলে গেল, কিন্তু ঘরের আলো জ্বলে উঠল দপ্‌ করে !


এই অণুগল্পটি  আরো দুটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে : কফিহাউসের আড্ডা এবং লোটাকম্বল

Sunday, May 9, 2010

রবি পক্ষে-কবি প্রণাম


                              (সত্যজিত রায়ের আঁকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কেচ )

সীমার মাঝে অসীম তুমি আমাদের এক রবি
তোমার গানে তুমি হ'লে সুরলোকের কবি ।
তোমার তুলির টানে তুমি আঁকলে ছন্দে ছবি
তোমার সুরে, অগ্নিবীণায় মূর্ত হ'ল রবি ।
আজি এ প্রভাতে রবির কিরণে,
প্রণমি তোমারে এই শুভ দিনে।
বেল জুঁই রজনীগন্ধায় ঢাকা তোমার মুখ !
কি প্রশান্তি দু'আঁখিতে তব, দেখি হয়ে উন্মুখ !
আজ তুমি নেই সাথে, বাণী রেখে গেছ পথে আমাদেরই তরে,
আজি শুভ দিনে, আমরা হাজির তোমায় প্রণাম করে।
পটেলিখা ছবি তুমি চির সমাদৃত আজ |
রূপে-রসে-রঙে টলোমলো, গোলাপের মতো সাজ!
শুনি তব পদক্ষেপ নির্জন সৈকত উপকূলে বসি,
এসেছিলে ধরাধামে কোন এক নক্ষত্র খসি |
ধন্য জীবন তোমার ধন্য ইহলোক,
সুরের ঝর্ণাধারায় প্লাবিত তোমার আলোক।
দিবস রজনী সাহিত্যের মহা আনন্দ ভোজ,
পঙতি ভোজনে আপ্যায়িত মোরা চেটেপুটে খাই রোজ |


শৈশবে মেঘের কোলে রোদের খেলায় বাদল যখন টুটি
ছোট্ট আমি নাচের তালে তারা হ'য়ে যেন ফুটি।
কৈশোরে তুমি সুরের গুরু দাও গো সুরে দীক্ষা,
তোমার গানে তোমার ছন্দে শুরু সংগীত শিক্ষা।
যৌবনে তুমি প্রেমের কবি আমার পরাণ যাহা চায়,
সে ছাড়া মোর কেহ নাহি আর আছে যেন এ ধরায়।
বিয়ের পরে অবগুন্ঠন খুলি, ভালোবাসি ভালোবাসি,
যাকে পেলাম তাকে নিয়ে তোমার সুরে বাজাই বাঁশি।
প্রৌঢ়ে আমার, তোমার সাথে বেলা যে যায় সাঁঝবেলাতে,
তোমার সুরে গানের ভেলায় ছন্দের দোলাতে।
বার্ধক্যের বারাণসীতে দেখি কি বিপুল তরঙ্গ!
উদ্বেলিত গগনে মোর পাখা ঢাকে বিহঙ্গ ।
আমার প্রাণে জাগালে তুমি সুরছন্দের দোলা
গানে কাব্যে মন ভরিয়ে সারাদিন করি খেলা।


আজ এ প্রভাতে শুভ ২৫শে বৈশাখ
পুনর্জন্ম হোক তোমার এই মোর অভিলাষ।
তোমার মন্দিরে আরতি করি
তুমি ফিরে এস নব রূপ ধরি।
বিকশিত কর অন্তর মম তোমারই নতুন গানে
বন্দিত হোক চরণ তোমার আমারই পুষ্পস্নানে।
নতুন নতুন গল্পগুচ্ছে কথা কাহিনীর সৃষ্টিতে
স্নাত হোক ধরা তোমার মুক্ত ঝর্ণাধারার বৃষ্টিতে

Saturday, May 8, 2010