Saturday, June 21, 2008

ব্-বা-বু উপাখ্যান

এবাড়ীর বাবু বেজায় কুঁড়ে, বিশাল তার ভুঁড়ি, ব্যাপক তার নাম ডাক, বড্ড ঘুম কাতুরে আর ভীষণ ভোজন রসিক বাবু কানে সুড়সুড়ি দিয়ে খুব আরাম বোধ করেন ,বাবু পুরো গরমকাল টা খালি গায়ে,সারা বর্ষাকাল টা ছাতি মাথায় না দিয়ে আর সমস্ত শীতকাল টা লেপ-কম্বল না গায়ে দিয়েই কাটিয়ে দেন ঘুম পেলে বাবু বড় বড় হাই তোলেন, আর বিকট হুঙ্কার ছাড়েন তাঁর নাসিকাগর্জনে ঘরের ঘুরন্ত পাখা মাঝে মাঝে থেমে যায় আর কি! নাকডাকানির চোটে বোলতা ঘরে ঢুকে ই ভয়ে বেরিয়ে যায় বাবু খেতে বড্ড ভালবাসেন তা সে যা' হোক, দর্পের সঙ্গে বলেন বাবু " anything that is not moving,while I am eating"চচ্চড়ি থেকে চিংড়ি ,বিয়ার থেকে বিড়ি, কাটলেট টু চকোলেট, পেস্ট্রি কি মিষ্টি ,বেগুনপোড়া থেকে সিঙ্গাড়া, সর্ষে কাঁকড়া দিয়ে শুরু করে পোস্ত-আমড়া, চিলি পর্ক টু মৌরলার টক, বিরিয়ানী সে লেডিকেনি তক সানন্দে গ্রহণ করেন যখন বিদেশে বাবু ছিলেন তখন যে সব 'edible exotica'র দ্বারা তাঁর gastronomic satisfaction হয়েছিল সেসব খাবারের গল্প এখনো সুযোগ পেলেই ছেলেকে শোনান কারন বাবু বিশ্বাস করেন যে সাহিত্য,অঙ্কের মত চর্চা না করলে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে তাঁর 'rude food'এর রসনাতৃপ্তির সুখস্মৃতি একদা জিভের কোণে হারিয়ে যাওয়া অয়েস্টারের ঘিলু কিংবা দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া বেবি অক্টোপাসের শুঁড়--এই সব আর কি! "কি ভালই না খেয়েছিলাম জানিস" সিঙ্গাপুরের পেল্লাই সি ফুড প্লাজায় কবে শার্ক-ফিন-স্যুপ খেতে খেতে বাবু হাঙ্গরের সাইজটা আন্দাজ করেন,কখনো স্টার-ফ্রায়েড-স্কুইড খেতে খেতে ডিস্.কভারি চ্যানেলে দেখা অতলান্তিকের তলায় অজস্র শুঁড় তোলা স্কুইডের ছবি ভেসে ওঠে তাঁর চোখে অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে বাবু অক্স্-টাং-ইন -অরেঞ্জ সস খেয়ে ভেবেছিলেন,এই কি সেই তার বাবার মুখে গল্প শোনা হলস্টাইন ষাঁড়ের জিভ চুষছি?--তুলতুলে নরম, কি সুস্বাদু!

ছাত্রাবস্থায় ,আমেরিকাতে থাকাকালীন 'রেড-লবস্টার' রেস্তোরাঁতে কিং সাইজ জাম্বো-মাম্বো গলদার রংচঙে ছবি দেখে বাবুর মনে হ'ত,"ইস ! কলকাতার জঞ্জালের ভ্যাটে যদি এর খোলা পড়ে থাকে তবে কুকুর-ছানা তার মধ্যে দিয়ে ঢুকবে আর বেরুবে" আমেরিকায় ছাত্রাবস্থায় এই লবস্টার affordকরা কি মুখের কথা? হতো যদি লেক-বাজার থেকে কিনে এনে কমলার মাকে বলতে পারতাম মালাইকারি বানাতে কিন্তু দশ ডলার দিয়ে একটা মাছ খেতে বুকে বড় ব্যাথা হয়,হাঁটুতে খঞ্জনি বাজতে শুরু করে কারন বাবা আসবার সময় বলে দিয়েছেন,ছাত্রাবস্থায় ডলার একদম নষ্ট না করতে, আগে চাকরী পাবে তার পর তাই লবেস্টার-কো-বাবালোগ দের নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হোত কোনদিন বাবু তার শালাবাবুর সাথে জমিয়ে বিয়ার খেতে খেতে প্যাসিফিকের তীরে বসে শ্যাম্পেন উইথ ক্যাভেয়ার সেবনের গল্প করেন সদ্য কাটা স্টার্জন মাছের ডিম কে দু-ফোঁটা লেবুর রস আর সস দিয়ে শ্যাম্পেনের সাথে পরিবেশন করা হয় "কোনদিন দেখবে, বর্ষায় থৈ থৈ লেকের জল থেকে কৈ মাছ ধরে ,হৈ হৈ করে তার পেট থেকে দুষ্প্রাপ্য কৈ-ডিম্ব কে বার করে ঐ ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে"বাবু বললেন

এ তো গেল বাবুর ভোজনবিলাসিতা বাবু যখন প্রথম মায়ের আঁচল ছেড়ে হোস্টেলে গেলেন ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে, ragging ধাক্কায় মিশমিশে কলো,সুললিত গোঁফজোড়ার একদিকটি ছেলেরা কামিয়ে দিয়েছিল|পরের বার বাড়ি আসার পরে মা তো তাঁর শ্বশ্রুগুম্ফহীন পুত্রকে দেখে তো মাথায় হাত! বাবু আসলে বাঁশবেড়িয়ার বাঁড়ুজ্যে নাম বংশগোপাল বাবু বরাবর ই বিস্তর বুদ্ধিমান বিদ্বানবাবু বিজ্ঞানশাস্ত্রে ব্যুত্পত্তি লাভ করে,বিদেশ থেকে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে পুনরায় স্বদেশে প্রত্যাগমন করেছিলেন; সেইখানেই বাবুর সাথে আর পাঁচজন বৈজ্ঞানিকের তফাত বাবু বইয়ের পোকা লেখনীর জোর ও বাগ্মী হিসেবে বিদ্বজনমহলে বাবুর কদর আছে বাবু বিগব্যাং থেকে বিশ্বযুদ্ধ,থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি থেকে গোদেল'স থিয়োরেম ম্যালথাস থেকে মুদ্রাস্ফিতী নিউটন থেকে নেতাজী, এমন কি বদ্রীবিশাল থেকে বিবেকনন্দের মাহাত্ম্য-- এ সব কিছু নিয়েই বহুক্ষণ আলোচনা চালাতে পারতেন বাবু খেলাধূলায় বিমুখ কিন্তু প্রত্যেক খেলার নিয়মাবলী বা সাজ-সরঞ্জাম বিষয়ে তাঁর জ্ঞানের পরিধি যেকোনো ক্রীড়াসাংবাদিককেও হার মানিয়ে দেবে কোন পোশাকে বিলিয়ার্ড রুমে ঢুকতে হয়্,গল্ফকোর্সের কোথায় গর্ত থাকে,পোলো খেলাতে কখন বিরতি হয় বা ফর্মুলা ওয়ান রেসিং এ কখন কটা পিটস্টপ হবে,এ সব তার নখদর্পণে

বাবু বেজায় কাবু হয়ে যান একটি ব্যাপারে,যখন তাকে গান নিয়ে কোনোও প্রশ্ন করা হয় সঙ্গীত ও আনুষাঙ্গিকের ওপর তার নেই কোনো টান-টুন এ জন্মে তার কন্ঠে গুপীর মতো বেসুর আর হস্তে বাঘার মতো বেতাল,তাই পরের জন্মে কোকিলের মাংসের বার্-বি-কিউ খাবার বাসনা আছে তার তাহলে যদি নারদমুনি একটু কৃপা করেন জগতের বুকে প্রতিনিয়ত কত ই না সুরসাধনা চলেছে, তাতে বাবুর কোনো হেলদোল নেই

বাবুর কাছে যাহাই সঙ্গীত তাহাই শব্দ,যাহাই শব্দ তাহাই দুষণ রূপে পরিগণিত হয়কে হেমন্ত,কে বসন্ত, কে আশা আর কে নিরাশা, কে রাঘব কে বোয়াল ,কে সোনু আর সে কি হনু, এসব নিতান্ত ই তুচ্ছ দাদরা,কাহারবা,কিম্বা jazz, rock, pop, reggae....মানেই "শব্দ-কল্প-দ্রুম্"|কেবল নিজের গালে পটাপট থাপ্পড় কষিয়ে আধুনিক তবলায় লহরী তোলার কড়া সমালোচক তিনি
বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমের যুগে আমরা যে বাবুচরিত্রের পরিচয় পাই সেই তথাকথিত বাবুদের থেকে আমাদের বংশের মুখ উজ্জ্বলকরা বংশগোপাল বাবু সম্পূর্ণ আলাদা ইনি বাপ-ঠাকুরদার পয়সায় ফুটানি না মারা বাবুইনি হেড অফিসের বড়বাবুর মতো ঘুষ না নেওয়া শান্তবাবু কখনো তার অকালপক্ক কেশরাজিকে রঞ্জিতকুন্তলে পরিণত না করা বাবু বিদেশের ভালটুকু নিয়ে ,আর বাঙালীয়ানাকে বিসর্জন ন দিয়ে বিদেশ থেকে ফিরে আসা বাবু বাবু ভোজন-পানীয়-নিদ্রা বিলাসী কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নয় তিনি পূর্বসুরীদের পয়সায় ফোতোকাপ্তেনি করা বাবু নন যিনি দুর্গাপুজোর শেষে নীলকন্ঠ পাখী না উড়িয়ে উত্তরসুরীদের জন্য সঞ্চয় করেন আধুনিক সমাজে যে বেগুণ সম্পন্ন বাবু উত্পন্ন হচ্ছে তা দেখলে মনে হয় এরূপ বাবুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে বাঙালীর ভবিষ্যতে হাতে হ্যারিকেন,গলায় গামছা

হঠাত্ বড়লোক বাবু তার্কিক বাবু ,অধুনা বড়লোক বাবু 'মিস্-ড্-কল্-কালচারে' অভ্যস্ত বাবু হালেরশাইন করা বাবু ' blue-arrows 'চড়া বাবু |সদ্য বড়লোক হওয়া বাবুর বাড়ীর মাছ-ভাত রোচেনা | বেশীবড় বিদ্বান বাবু বিদেশে গিয়ে দেশের কথা ভুলে যান বেঁড়ে পাকা আজকের বাবুদের ছদ্মগাম্ভীর্য ই সার বিশ্বায়নের প্রবল গতিতে তাদের বিচার,বুদ্ধি,বিবেক প্রায় লোপ পেতে বসেছে |
আর ঘুমিয়ে একবার পড়লে আর রক্ষে নেই

Sunday, June 1, 2008

বিষয় - একটি একাঙ্ক নাটক

নাট্যকার - জয় নন্দী।
নাটক - "গ্রামের মেয়ে মমতার ক্ষমতা" ।
নির্দেশনা - শাঁওলি মিত্র।
অভিনয়ে - অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, ব্রাত্য বসু।
শিল্পনির্দেশনা - শুভাপ্রসন্ন।
স্থান - খেজুরি গ্রাম পঞ্চায়েত ভবন, মুক্তমঞ্চ।


প্রথম দৃশ্য

[ স্থানীয় চাষী উপেন মালিক হাত জোড় করে জমিদার বাবুর নিকট হাঁটু গেড়ে বসে আছে।]
বাবু বলিলেন "বুঝেচো উপেন! এ জমি লইব কিনে"।
উপেন বলিল "আপনি ভূস্বামী ভূমির অন্ত নাই, চেয়ে দেখো মোর আছে বড় জোর মরিবার মত ঠাঁই"।
বাবু - "পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীর্ঘে, গড়ি রসায়ন কারখানা"।
উপেন (কাঁদিতে কাঁদিতে) - "শুধু বিঘা দুই ছিল মোর ভূঁই ..."।

দ্বিতীয় দৃশ্য

[ উপেনের পুত্র তাপস মালিকের প্রবেশ। ]
বাবু - "ন্যায্য মূল্যের বিনিময়েও দেবে না জমি?"
তাপস - "বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনি(পুর)" ।

তৃতীয় দৃশ্য

উপেনের পৌত্র, তাপসের পুত্র ভূপেন ও তার বন্ধু খগেনের প্রবেশ।
ভূপেন - "এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা"।
খগেন - "আর আবাদ না করলে তোমার বৌএর গায়ে উঠত সোনা"।
ভূপেন - "বেশ ত ছিলাম, খাচ্ছিল চাষী ধান বুনে"।
খগেন - "আরো ভাল হত , জমি বেচে , ন্যানো গাড়ী কিনে ..."।
ভূপেন - "আমরা চাষ করি আনন্দে ... আয় রে মোরা ফসল কাটি ফসল কাটি"।
খগেন - "না ভাই, ফসল নয়, খাল কাটি জাহাজ আনি ..." ।
..............
বিবেকের প্রবেশ - "যে আছে মাটির কাছাকাছি সে কবির বাণী লাগি কান পেতে আছি"।
বাউল (গান ধরে) "গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভুলায় রে "।
বিবেক - "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি"।
সমবেত কণ্ঠে - "ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা , আমাদের এই বসুন্ধরা। তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা"।